1. admin@jn24news.com : admin :
  2. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

উত্তরায় ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা লুট: বাকি তিন কোটি কি উদ্ধার হবে?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৭৪ Time View

জেএন২৪ নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর উত্তরায় ফিল্মি স্টাইলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী গাড়ি থেকে লুট হয় সোয়া ১১ কোটি টাকা, যার মধ্যে এখনো তিন কোটির বেশি টাকার উদ্ধার হয়নি। ঘটনার সাড়ে ছয় মাস চলে গেলেও বাকি টাকা উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গত ৯ মার্চ সকালে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড উত্তরায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহন করার সময় লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় বাকি তিন কোটি টাকা উদ্ধারে পুলিশের অগ্রগতি কী, মামলা কতদূর এগিয়েছে, ভুক্তভোগীরা কী বলছেন- এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস।

জানা গেছে, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর আট কোটি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার এবং ডাকাতির ২০ লাখ টাকায় কেনা একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। কিছু টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি। সেই টাকা উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আর মামলার তদন্ত অনেকদূর গুছিয়ে এসেছে, দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

মামলার বাদী বলছেন, তিন কোটির বেশি টাকা উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। আমরা কি এই টাকা পাব না? যারাই টাকাগুলো লুট করেছিল তারা তো এতদিন সেই টাকা গচ্ছিত রাখেনি; অবশ্যই খরচ করে ফেলেছে।

যেভাবে পরিকল্পনা: মিরপুর ডিওএইচএসের সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্ল্যান্টের গাড়িতে করে সোয়া ১১ কোটি টাকা নিয়ে সাভারের ইপিজেডে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তুরাগ এলাকায় সশস্ত্র কয়েকজন বন্দুকের মুখে টাকার চারটি ট্রাঙ্ক লুট করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, টাকা লুটের ঘটনার এক বছর আগে ডাকাতির পরিকল্পনা হয় উত্তরার একটি চায়ের দোকানে বসে। ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা হয় ভাড়াটে ডাকাত দল। মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে প্রধান ছিলেন গোপালগঞ্জের ডিবি পরিচয়ে পেশাদার ডাকাত আকাশ আহমেদ বাবলু, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের সাবেক চালক সোহেল রানা এবং আকাশ আহমেদের পূর্ব পরিচিত গোপালগঞ্জ সদরের হাবিবুর রহমান হাবিব।

তিনজনসহ মোট ১৩ জন গ্রেপ্তার হলেও এখনো অধরা ৩ ডাকাত। উদ্ধার করা যায়নি ৩ কোটি টাকা। বাকি আসামি ও টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। চাঞ্চল্যকর মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত দাখিল করা হবে।

যেভাবে টাকা লুট: ঘটনার দিন (৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরার তুরাগ এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে পৌঁছে দেওয়ার পথে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ডাকাতি হয়। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওইদিন বিকালে তুরাগ থানায় মামলা করেন মানি প্ল্যান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন।

ডাকাতির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা অসংখ্য সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানতে পারি, বনানী থেকে হেঁটে হেঁটে কুর্মিটোলা এসেছিল ডাকাতরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খিলক্ষেত এলাকায় একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। ওই গাড়িতে থাকা তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধার করা হয়। যা গণনা করে ডাকাতির ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

এই ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক আকাশ মাদবর জানান, আগের রাতে সিলেট যাওয়ার কথা বলে কালো হাইয়েস গাড়ি ভাড়া করেন মাসুদ নামে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি। ৯ মার্চ সকালে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে থেকে ৮/১০ জন মিলে তাকে বেঁধে পায়ের কাছে ফেলে বিমানবন্দর এলাকায় ইউটার্ন করে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় যায়। সেখানে তারা মানি প্ল্যান্টের গাড়িতে টাকা ডাকাতি করে।

গ্রেপ্তার যারা: আলোচিত এই ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন- হাবিবুর রহমান হাবিব, আকাশ আহমেদ বাবলু, মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের সাবেক চালক সোহেল রানা, মিলন মিয়া, মো. হৃদয়, আকাশ মাতবর, সাগর মাতবর, সানোয়ার হাসান, ইমন ওরফে মিলন, বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই মিয়া, এনামুল হক বাদশা।

তবে এখনো অধরা ডাকাত দলের সদস্য জনি, মোস্তফা ও হিমন।

যা জানিয়েছিলেন ডিবি প্রধান: আসামিদের গ্রেপ্তারের পর ডিবি পুলিশ জানায়, ডাকাতির ঘটনায় কয়েক স্তরের বিভিন্নজনের আলাদা দায়িত্ব ছিল। কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিলেন মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিলেন কামলা ও কামলা সংগ্রহকারী। ডাকাতির পরিকল্পনা বিষয়টি সোহেল রানা মিলনের সঙ্গে শেয়ার করেন। মিলন জানান সানোয়ারকে। সানোয়ার দায়িত্ব নেন কামলা (ডাকাত) সংগ্রহের। যাদের নামে একাধিক মামলা আছে ও বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে একজন (আগে গ্রেপ্তার) এনামুল হক বাদশা। যার নামে রয়েছে ২৭টি ডাকাতির মামলা। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ থেকে এরকম ৯ জনকে ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দায়িত্ব হচ্ছে ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য ওখান থেকে মোবাইল ও সিম কিনে নিয়ে আসবে।

সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করেন এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে পরে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার দুইদিন আগে ঢাকায় একত্রিত হন। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেন। আকাশ ও সোহেল ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখেন মিলন ও সানোয়ারের কাছে। তারা জানান যে, তারা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবেন এবং সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে ওঠার পর বুঝতে পারেন বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

ডাকাতির পর আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা ধারণা করেন যে, আকাশ ধরা পড়ে গেছে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় ফেলে দেন। তাই তারা ট্রাঙ্ক ভেঙে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়া করেন। পরে তারা ৩০০ ফুটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মতো টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের দেশের বিভিন্ন জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে সংগ্রহ করা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মতো বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যান এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করেন। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও লুটের টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা দেরি হয়।

ডাকাতির পরিকল্পনাকারী আকাশ: তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী মো. আকাশ আহমেদ বাবলু। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে ডাকাতি করা তার পেশা। উত্তরায় চায়ের দোকানে বসে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রা. লি. এর সাবেক চালক সোহেল রানার সঙ্গে পরিচয়। সেই ‍সূত্রে কথাবার্তা হয়। সোহেল রানাই আকাশকে মানি প্ল্যান্টের গাড়ি থেকে টাকা ডাকাতির পরিকল্পনা কৌশলের কথা জানায়।

তদন্ত সংস্থা ডিবি যা বলছে: মামলার সবশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হলে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। আমরা সবকিছু প্রায় গুছিয়ে এনেছি। দ্রুতই আদালত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

টাকা উদ্ধারে অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের টিম কাজ করছে। তবে এখনও তেমন সুখবর নেই। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন এখনও আত্মগোপনে। তাদের ধরতে আমরা কাজ করছি।’

মানি প্ল্যান্ট লিমিটেডের পরিচালক অজয় কর বলেন, ‘বাকি প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা উদ্ধারে পুলিশের কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। অনেকদিন হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা অবশ্যই টাকা খরচ করে ফেলছে। টাকা উদ্ধারেও পুলিশের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Breaking News
Theme Customized By BreakingNews