জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: সরকার আইনের অপব্যাখা দিয়ে বন্দি রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সরকার জানে বেগম জিয়া যদি আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন তাহলে তার ডাকে জনগণ সাড়া দিয়ে এই অবৈধ সরকারের সব অবিচার, অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়াবে। তছনছ হয়ে যাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা।
সোমবার বিকালে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন দুপুর ২টার সময় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা এগারোটা থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বিএনপি মহাসচিব যখন মঞ্চে আসেন তখন বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় সমাবেশের বিস্তৃতি ঘটে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দুটি শিশু সন্তানসহ পাক বাহিনী আটক রাখে। আমি বলব তিনি ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। অবশ্য এ কথা বললে আওয়ামী লীগের গা জ্বলবে। তারাতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, পাকিস্তানের ভাতা খেয়েছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। তিনি ক্ষমতায় এসেই কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করেছেন। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করেছেন। আর এখন ঋণের কারণে কৃষকের কোমড়ে দরি ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা লুটেরা সরকার। এরা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করছেন। অথচ, আজকে কৃষক ন্যয্য মূল্য পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব জায়গায় সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করছে যে, সব টাকা আজ ওদের পকেটে। আজ কৃষক ভাইদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার কৃষকদের যে ধান কিনে সেখানেও কমিশন। বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার ওপরও ওরা বসায়। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। আওয়ামী ব্যবসায়ীরা আজ ব্যবসা করছে। সাধারণ মানুষ চাকরি পায় না। বিশ লাখ টাকা দিয়ে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়।
তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন আইন দেখানো হচ্ছে। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কানের চিকিৎসার জন্য বন্দি থাকা অবস্থায় বিদেশ যান নাই? আসলে তারা খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। এরা জোর করে তাকে (খালেদা জিয়া) বন্দি করে রেখেছে। আজকে মনে হচ্ছে শাসকরা রাজা আর আমরা প্রজা। এরজন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। আমরা রাজতন্ত্রের জন্য নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছি।
‘আজকে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সব কিছু ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবজায়গায় দলীয়করণ। মেগা দূর্নীতি করার জন্য মেগা উন্নয়নের নামে উড়াল সেতু, টার্মিনাল বানাচ্ছেন। জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা ছাত্রাবস্থায় গান গেতাম ২০ টাকায় তেল খেয়ে স্বর্গে যাব গো..। আজকেও কৃষকরা গান গাচ্ছেন ফ্লাইওভার, টার্মিনাল দিয়ে স্বর্গে যাব গো।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, এ সরকার এখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। দেশকে এরা জাহান্নামের দিকে নিয়ে গেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষ শান্তিতে থাকে, দুমুঠো ভাত খেতে পারে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। আবার বলছেন নির্বাচন হবেই। খুবই মজা পেয়েছে! ভেবেছেন এবারও বিএনপিকে দূরে রেখে আবারও একতরফা নির্বাচন করবে। আজকে এর প্রতিরোধ গড়তে শুধু বিএনপি নয় দেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং জনতা এক হয়েছে। এদেশে আর কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে সরকার লেগেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশকে আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ সরকার? এ মাসে সবচেয়ে রেমিট্যান্স কম এসেছে। কারণ, এদেশের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। এখনো সময় আছে যদি সংকট দূর করতে চান, দেশের ভালো চান তাহলে মানে মানে কেটে পড়ুন। তা না হলে দেশের মানুষ জানে কীভাবে বিদায় করতে হয়। আজকে সবাই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠেছে। আসুন আগামীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।৷
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দল নেতা নাসরিন হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন প্রমুখ।
Leave a Reply