জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে নিরাপদে মিয়ানমারে নিজ গ্রামে ফেরার দাবিতে ক্যাম্পে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।
মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকালে বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে উখিয়ার লম্বাশিয়াসহ আরো কয়েকটি ক্যাম্পে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শিশু-কিশোরসহ হাজারো রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দাবিতে শ্লোগান দেয়।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমরা খুশিতে নয় গণহত্যার শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছি। আমরা এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। আমরা শরণার্থী জীবন চাই না। নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। আমাদের দাবিগুলো পূরণে মিয়ানমার যাতে বাধ্য হয়, সে জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বক্তব্য রাখেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) নেতা ও রোহিঙ্গা শরণার্থী মাস্টার মো. রফিক, মাস্টার মো. কামাল।
কামাল বলেন, আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা আর রিফিউজি জীবন চাই না। নিজ দেশে গিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই। কারণ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নই, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের নাগরিকত্ব, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি আর নিজ গ্রামের ভিটে-মাটি ফেরত দিলেই আমরা ফিরে যাব।
তিনি বলেন, রিফিউজি দিবস আসে আর যায় কিন্তু রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এই দিনে যাতে আর কোনো মানুষ নতুন করে রিফিউজি না হয়। যাতে আজকের দিনে রিফিউজি দিবস শেষ হয়।
এই ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে রোহিঙ্গারা দুইটি স্থানে সমাবেশ করেছে। সেখানে পাচঁ হাজারের বেশি রোহিঙ্গারা অংশ নেয়। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সমাবেশে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, অধিকার ভিত্তিক সংগঠগুলোর নেতৃবৃন্দরা নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সেকেন্ড ট্র্যাক সিভিল সোসাইটি ভিত্তিক কুটনৈতিক তৎপরতা চালানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন নাগরিক সমাজ।
২০ জুন বিশ্ব শরনার্থী দিবসকে ঘিরে কক্সবাজারভিত্তিক এনজিও নেটওয়ার্ক- সিসিএনএফ ও কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২০ জুন) ছিলো বিশ্ব শরণার্থী দিবস। ২০০১ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। প্রতিবছর বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। শরণার্থীদের অধিকার ও পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী তুলে ধরে সচেতনতা তৈরিই দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৭৭ জনের একজন শরণার্থী। প্রতিবছর শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে সংস্থাটি যুদ্ধ, সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, চরমপন্থা, দারিদ্র্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য সংকটসহ বিভিন্নি ইস্যুকে চিহ্নিত করেছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি।
ইউএনএইচসিআর আরো বলছে, চলমান যুদ্ধ, সংঘাত, জলবায়ু সংকটে বিশ্বজুড়ে আরও মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৭ লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। দেশটিতে সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে আরো প্রায় ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ।
Leave a Reply