জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: বিএনপি শুধু খুনের রাজনীতি জানে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন ‘২১ আগস্টের গ্রেনড হামলায় খালেদা, তারেক গং জড়িত। শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, আলামতও ধ্বংস করা হয়। ২১ আগস্টের মূলহোতা মুচলেকা দিয়ে বিদেশে চলে গেছে।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি সরকারের বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত বোমা-গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারবেন না। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন শেখ হাসিনা একশ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
‘কী করে তিনি এ কথা বলেছিলেন? কারণ, তারা পরিকল্পনা করে আমাকে ও আমার দলের নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। হত্যার উদ্দেশে কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির হাতে রক্ত। জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে ২০০৪ সাল খালেদা জিয়া একইভাবে হত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসি তখন ২০১৪ সালে বিএনপির নতুন করে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে বহু মানুষ হত্যা করেছে।’
‘যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমার আপনজন হারিয়েছি তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল, যখন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল?’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই দেখি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। আমার আপনজনকে হত্যা করার পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে জিয়াউর রহমান আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল?’
‘এই হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত’ বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পরে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছি। কেউ অন্যায় করলে তাদের বিচার আমরা করি। বিএনপির শাসন আমলে তো বিচার চাইতেই পারিনি।’
‘জিয়া পরিবার খুনি পরিবার’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে এখন বিদেশে আছে। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে বলেই সেই সুবিধা নিয়ে বিদেশে বসে বক্তব্য দেয়। সাহস থাকলে বিদেশে বসে আছে কেন, বাংলাদেশে আসুক। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ছাড়বে? বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।’
এসময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যারা গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছে সেই ক্ষত সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা জানানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪ সালে যখন গ্রেনেড হামলা করা হয় তখন ক্ষমতায় ছিল খালেদা জিয়া। তখন তিনি এই হামলার বিচার করেননি। বরং সিটি করপোরেশনে লোক পাঠিয়ে আলামত ধুয়ে পরিষ্কার করে। গ্রেনেড হামলার বিচার না করে খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন, তিনি এই হামলায় জড়িত।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্জেস গ্রেনেড যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর। সেটা ব্যবহার হলো যখন আমরা মানুষের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি। একটা-দুইটা না, ১৩টা গ্রেনেড। আর কত যে তাদের হাতে ছিল কে জানে? সেদিন বেঁচে গেলাম সেটাই অবাক বিস্ময়।’
তিনি বলেন, ‘আমি বক্তব্য শেষ করেছি, নিচে নামব, তখন ফটোগ্রাফার গোর্কি আমাকে বললো- একটু দাঁড়ান ছবি নিব। এরপর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমার পাশে ছিল, সঙ্গে সঙ্গে তিনি টেনে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরল মানব ঢাল তৈরি করে। যেসব গ্রেনেড ছোঁড়া হলো সেগুলো ট্রাকের ওপরে না পড়ে ট্রাকের ডালার সঙ্গে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত গা রক্ত বয়ে যায়, আমার কাপড়ে এসে পড়ছে। প্রথমে তিনটা পড়লেও একটু পর আবার একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে থাকে।’
‘বিএনপিকে খুনি দল’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের শপথ নিতে হবে খুনির দল যেন আর বাংলাদেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি যেন আর দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বারবার হত্যার মুখে থেকে যখন আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে আছি এদেশের মানুষের সেবা করে যাব, মানুষকে উন্নত জীবন দিয়ে যাব। বাংলাদেশ ঘুরে দাড়িয়েছে, উন্নত জীবন পেয়েছে এই মর্যাদা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে একটা হবে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
তিনি বলেন, ‘চোর, মানিলন্ডারিং, ঘুষখোর, সন্ত্রাসীরা যাতে এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এজন্য তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। আমি চাই এদেশে সব মানুষ তাদেরকে ঘৃণা করুক।’
Leave a Reply