জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর মগবাজার মোড় থেকে রেলগেট পেরিয়ে শাহ নূরীর মাজারঘেঁষা গলি দিয়ে সামনে এগোতেই শাহ নূরী মডেল হাইস্কুল বালিকা শাখা। সেখানেই রয়েছে ঢাকা-১২ আসনের তিনটি কেন্দ্র ১২১, ১২২ ও ১২৩। যে আসনের অন্যতম প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গোটা কেন্দ্রজুড়ে নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থীর সমর্থকদেরই দেখা গেছে। নৌকার ভোটার স্লিপ নিয়ে ভেতরে ঢুকলে যাচাই-বাছাই নেই, অনায়াসেই মিলছিল ব্যালট পেপার।
রবিবার ভোট চলাকালীন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত কেন্দ্রটির ভেতরে ও আশপাশে সরেজমিনে দেখা গেছে, গোটা পরিবেশ ঢিলেঢালা। নারী ভোটারদের এ কেন্দ্রটিতে ঘুরেফিরে ঢোকানো হচ্ছিল। একই নারীরাই ঢুকছেন, ব্যালট নিচ্ছেন, সিল মারছেন।
এ আসনে প্রার্থী ছয়জন হলেও এই ভোটকেন্দ্রে সবার এজেন্ট দেখা যায়নি। নৌকার এজেন্ট পাওয়া গেছে সব বুথে। সঙ্গে ভোটার লিস্ট ও কলম নিয়ে বসেছিলেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী শাহীন খান ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী খোরশেদ আলম খুশুর এজেন্ট। তবে জানতে চাইলে লাঙল প্রতীকের কোনো এজেন্টই প্রার্থীর নাম বলতে পারেননি। এভাবে ‘সাজানো’ এজেন্ট দিয়েই চলছিল কেন্দ্রটির ভোট।
এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- মুহম্মদ আব্দুল হাকিম (মোমবাতি), আতিকুর রহমান নাজিম (টেলিভিশন) ও তৃণমূল বিএনপির নাইম হাসান (সোনালী আঁশ)।
সরেজমিনে কেন্দ্রটির দোতলায় গিয়ে দেখা গেছে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট ও নির্বাচনি কর্মকর্তারা। সেখানে ছিলেন ৩৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাহবুব রহমান। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নৌকার পক্ষে ভোটারদের ভোট দেওয়াচ্ছিলেন। জানতে চাইলে এই আওয়ামী লীগ নেতা সেখানে থাকার কারণ জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘নারী ভোটার তো, কোন বুথে যাবেন- তা বুঝে উঠতে পারেন না- তাই তাদের সাহায্য করছি।’ স্কুল ভবনটির নিচ তলার বুথে আরও নেতারা একই কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
একপর্যায়ে নিচ তলায় গিয়ে দেখা যায়, যাচাই ছাড়াই সামনে দাঁড়ানো কয়েকজনকে ব্যালটপেপার দিচ্ছেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মাহির শাহরিয়ার। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘এটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভোটকেন্দ্র। কোনো কথা বলতে মানা। প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
এরপর মাহির শাহরিয়ার নিজেই এ প্রতিবেদককে প্রিজাইডিং অফিসার ঢাকা পলিটেকনিক্যালের চিফ ইন্সট্রাকটর মো. নাজমুন হান্নানের কাছে নিয়ে যান। পরে প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। কোনো ঝামেলা হয়নি।’
৩০১ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার শেখ শহীদুল ইসলাম। সেখানে নৌকার এজেন্ট হিসেবে পাওয়া গেছে সালমা আক্তারকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীন খানের এজেন্ট ছিলেন সাদিয়া আক্তার। তার পাশেই ভোটার তালিকায় কলম দিয়ে দাগাচ্ছিলেন পান্না আক্তার কিরণ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র লাঙ্গল মার্কার এজেন্ট আমি।’ লাঙ্গল মার্কাতো স্বতন্ত্র নয় জানালে হাতের ভোটার তালিকার পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকেন তিনি। আর খুঁজতে থাকেন এই ভোটার তালিকার সঙ্গে রাখা লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর ভোটার স্লিপ। একপর্যায়ে তিনি যে প্রার্থীর এজেন্ট, সেই প্রার্থীর নাম জানতে চাইলে বলতে পারেননি।
Leave a Reply