জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। প্রায় এক সপ্তাহ পর কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। স্বস্তি ফিরে পেয়েছে এলাকার মানুষ। সুনামগঞ্জে শনিবার সকাল থেকে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। গতকাল সকাল থেকে আবারও শুরু হয়েছে অতিরিক্ত গরম। বৃষ্টি না হওয়ায় তলিয়ে যাওয়া সড়ক থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। এতে হাওরবাসীদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। এদিকে, টানা এক সপ্তাহ পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদনদীর পানি বাড়তে থাকে। এতে প্লাবিত হয় জেলার নিম্নাঞ্চল। তবে গত শুক্রবার সকাল থেকে সব নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কমার পর শনিবার ভোর থেকে ধরলা, দুধকুমা, গঙ্গাধরসহ অন্য নদনদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে নেমে গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সুনামগঞ্জ: গত ১৫ জুন থেকে সুরমা নদীর পানি জেলার সব কটি হাওর উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে। ফলে নিম্নাঞ্চলে গ্রামগুলোতে পানির চাপ বেড়ে যায়। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াও হাওরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।
সুনামগঞ্জ জেলার ছয়টি স্টেশনের মধ্যে তিনটি স্টেশনের পানি কমেছে। একটি স্টেশনের অপরিবর্তিত আছে ও দুটি স্টেশনে পানি সামান্য বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন বৃষ্টি হয়নি। সব নদ-নদীর পানি কমছে। জেলায় বন্যার আশঙ্কা নেই।
এদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল কমায় ছাতক পয়েন্টে পানি কমেছে ১৪ সেন্টিমিটার। বর্তমানে বিপদ সীমার ৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি।
পাউবো থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ০ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদ সীমার ০ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে অর্থাৎ ৭ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার উচ্চতায় সুরমা নদীর প্রবাহিত হচ্ছে।
দিরাই উপজেলার পুরাতন সুরমা নদীর পানি ০ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদ সীমার ০ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচে।
অপরদিকে জাদুকাটা নদীর পানি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ০ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদ সীমার ২ মিটার নিচে রয়েছে।
এ ছাড়াও জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর পানি ০ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলার পাটনাই নদীর পানির উচ্চতা অপরিবর্তিত রয়েছে, শুক্রবারের মতো ৬ দশমিক ১ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে পানি।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও চেরাপুঞ্জিতে তেমন বৃষ্টি হয়নি। নদ-নদীর পানি কমছে। ছাতক পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদ সীমার ৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য পয়েন্টেও পানি কমেছে। জেলার বন্যার আশঙ্কা নেই।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে স্বল্প মেয়াদি বন্যার শঙ্কা ছিল। তবে আগামী দুদিন বৃষ্টি হবে না। বৃষ্টি না হলে নদীর পানি কমবে। এতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
কুড়িগ্রাম: গত শুক্রবার সকাল থেকে সব নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কমার পর শনিবার ভোর থেকে ধরলা, দুধকুমা, গঙ্গাধরসহ অন্য নদনদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে নেমে গেছে। তবে উলিপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার প্রায় ৬০টি গ্রামে এখনও পানি রয়েছে। এসব গ্রামে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে কয়েকটি চরে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। পানি কমলেও অনেকে এখনও নৌকা ও উঁচু স্থানে রয়েছেন। পুরো পানি না সরলে নিজেদের বসতভিটায় ফিরতে পারছেন না তাঁরা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি সদর পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ইয়ুথনেটের বাসিন্দা জহুরুল হক বলেন, ‘দুইদিন থাকি রোইদ ওঠে। রোইদের কারণে পানি টান (কমা) শুরু করছে।’ নাগেশ্বরীর দুধকুমার তীরের বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘জেলার সব নদীর পানি কমায় এবারের বন্যার ধাক্কা থাকি রেহায় পাইলাম।’সদরে ব্রহ্মপুত্রের চিড়া খাওয়া চরের বাসিন্দা মো. লিটন বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরের পর থাকি এলাকার পানি কমা শুরু করছে। বৃষ্টি না থাকায় সবার মধ্যে একটা স্বস্তি ভাব দেখা যায়।’পাউবো কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে অনেক পানি কমেছে। বন্যা সতর্কীকরণের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গতকাল থেকে সমতলে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদের আগে ও পরে আগামী দুই সপ্তাহে এ অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, সব নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় চরের মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। পুরো পানি না কমা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ইউএনওদের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। নতুন করে জিআর প্রতিষ্ঠানের জন্য ৮০০ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। এ ছাড়া ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
Leave a Reply