জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: সকালে উঠেই গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, গা ম্যাজম্যাজ, ক্লান্তি থেকে শুরু করে হাতে পায়ের পেশিতে ব্যথা, হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া। কৈশোরের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই ভিড় করে আসছে এমন রকমারি সমস্যা। এই সব সমস্যার কারণ কিন্তু একটাই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। এই ভিটামিন শরীরে নানা কাজে লাগে। ফলে এটির অভাব হলে কেবল মাত্র হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা ব্যথা-বেদনা নয়, তৈরি হতে পারে আরও বড় সমস্যা। পেশি নাড়াচাড়া করতেও প্রয়োজন হয় এই ভিটামিনের। এমনকি, এর সাহায্য ছাড়া মস্তিষ্ক থেকে সারা শরীরে বার্তা পর্যন্ত পাঠাতে পারে না স্নায়ু। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এই ভিটামিনটি ছাড়া ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসদের প্রতিহত করা দুঃসাধ্য।
দেহের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভিটামিন ‘ডি’ একটি ফ্যাট সলিউবল সিকুস্টারয়েড বা স্টেরয়েড হরমোন। এর কাজ হচ্ছে– দেহের অন্ত্র (ইনটেসটাইন) থেকে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করা। এটি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসকেও দ্রবীভূত করে।
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে। ভিটামিন ডি ইমিউনিটি বাড়াতে পারে। নার্ভ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে এই ভিটামিন। ভিটামিন ডি শরীরে ঠিক পরিমাণে থাকলে দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সুগার রোগীদের ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডি কার্যকরী। ভিটামিন ডি শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। ভিটামিন ডি ফুসফুসের কার্যকারিতাও বাড়াতে পারে। তাই চিন্তার কোনও কারণ নেই। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে ভিটামিন ডি। শরীরে ক্যালশিয়াম সংশ্লেষে সাহায্য করে ভিটামিন ডি। ক্যানসারের মতো রোগকেও দূরে রাখতে পারে ভিটামিন ডি।
বয়সের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে শরীরে কতটুকু ভিটামিন ডি-র প্রয়োজন। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬০০ ইউনিট ও ১০০০ মাইক্রো গ্রাম ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। বয়স বেড়ে ৭০-এর কোঠায় এলে ভিটামিন ডি-র চাহিদার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ মাইক্রোগ্রাম।
ভিটামিন ডি-এর প্রধান প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ত্বকের এপিডার্মিসের নীচের স্থানে কলিক্যালসিফেরলের সংশ্লেষণের মাধ্যমে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। খাবারের থেকে ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি আমরা। হাড়ের গঠন ঠিক রাখার জন্য আমাদের শরীরে ভিটামিন-ডির খুই প্রযোজন। হাড়কে ক্যালসিয়াম জোগায় এই ভিটামিন।
যেসব লক্ষণে বুঝবেন শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে অবসাদ, ক্লান্তিবোধ করা, প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়া, হাড় এবং পিঠে ব্যথা, শরীরের ঘা শুকাতে দেরি হলে, হাড় ক্ষয় হতে শুরু করলে, মাংসপেশিতে ব্যথা, চুল পড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দিলে হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। চিকিৎসকের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর অভাবে নরম হাড় ও রিকেট রোগ দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীরে ভিটামিন ডি না গেলে অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো রোগ হয়। যা পরে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে।
নির্ধারিত মাত্রায়, ভিটামিন ডির ঔষধ নিতে পারলে, আপনার শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ হতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন ১০ মিনিট সূর্যের আলোর নিচে বসতে পারেন তাহলেও ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ হবে।
চিকিৎসকের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে ২০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন। তবে ব্যক্তিভেদে এই চাহিদা কমবেশি হতে পারে, পুরোটাই নির্ভর করে মানুষের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের উপর।
গবেষকরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে, যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-
ডিম
ডিমে অল্প পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন তাদের ডিমের কুসুম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।
দুগ্ধজাত খাবার
ভিটামিন ডির ভালো একটি উৎস হলো দুধ। দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন এ, বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, আয়োডিন, পটাশিয়াম, ফোলেট, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি (সিক্স, টুয়েলভ), জিংক, চিনি, ফ্যাট ও ক্যালরি। দাঁত, চুল, নখ ও ত্বকে পুষ্টি জোগায়। রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে। হাড় মজবুত করতে ও শরীরকে চাঙ্গা করতে রোজের ডায়েটে দুধ, দই, ছানা, ছাঁচ, চিজ এগুলো রাখা যেতেই পারে।
পালং শাক
পালং শাকে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম থাকে। তাই রোজের ডায়েটে বিভিন্নভাবে পালং শাক খেতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের মাছ
বিভিন্ন মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ স্যালমন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সারদিনস, টুনা, ম্যাককেরেলে পাবেন ভিটামিন ডি। চিংড়ি মাছেও ভালো পরিমাণে থাকে ভিটামিন ডি। দৈনিক ভিটামিন ডির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে একটি টুনা মাছের স্যান্ডউইচ বা তিন আউন্স ওজনের একটি স্যালমান মাছের টুকরো থেকে। এছাড়া তেলাপিয়ার মতো তেলযুক্ত মাছ ভিটামিন ডি-র ভাল উৎস। এই মাছ প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে ক্যালশিয়াম ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডেরও ঘাটতি মেটে।
মাশরুম
মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এই মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। পরটোবেললো মাশরুম সূর্যের আলোয় বড় হয়, এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি। নিয়মিত মাশরুম খেতে পারেন।
কমলার জুস
ভিটামিন ডির জন্য কমলার জুস খেতে পারেন। ভালো মানের কমলার জুস প্যাকেটেও পাওয়া যায়। তবে খাওয়ার আগে প্যাকেটের গায়ে দেখে নিন, কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি।
সোয়া মিল্ক
সোয়া মিল্ক খাবারে রয়েছে অনেক প্রোটিন। তাই এই খাবার যে কোনও মানুষ খেতে পারেন। এই প্রোটিন শরীরের পক্ষে ভালো। এছাড়াও দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত সোয়া মিল্ক খেলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি কমে। এছাড়া আপনি টোফু খেতে পারেন। তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
শস্যদানা
ভাত, ডাল, ওটস, ডালিয়া, আটার মতো খাবারে কিন্তু ভালো পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই এই খাবারগুলি নিয়মিত খেলেও শরীরে পৌঁছে যায় ভিটামিন ডি। এবার এই খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবেই ভালো থাকবেন।
পনির
পনির বা চিজেও ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে প্রচুর লবণ দেয়া পনির এড়ানোই ভালো।
লিভার বা যকৃৎ
রান্না করা ২.৫ আউন্স বা ৭০ গ্রাম পরিমাণ গরুর কলিজায় ৩৬ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণীতে থাকে না। তবে এতে কোলেস্টেরল বেশি বলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
Leave a Reply