জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এর মধ্যে একটা দীর্ঘ সময় তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ থেকে রেহাই পাননি খোদ দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষনেতারা।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলেও কঠিন কোনো আন্দোলনে যেতে কার্যত ‘ব্যর্থ’ হয় বিএনপি।
সম্প্রতি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত করলেও ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে কিছুটা হোঁচট খায় বিএনপি। আর অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখেই শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছেন দলের শীর্ষনেতারা।
মূলত বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। বিভাগীয় শহরগুলোতে তারা ধারাবাহিকভাবে জনসভার আয়োজন করতে শুরু করে। ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে তা একটি পরিণতি পাবে, তেমন আশা বিএনপির অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থকের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে দলটি তার শক্তি-সামর্থ্য ও জনসমর্থনের বিষয়টি প্রমাণ করেছিল ঠিকই, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো ফল তারা পায়নি। বিএনপির কর্মীসমর্থকদের মধ্যে আশাবাদ ধরে রাখার বিষয়টি তখন স্বাভাবিকভাবেই বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
এরপর পদযাত্রা ও মানববন্ধনের মত ‘দুর্বল’ কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে দলটি। ২০২২ সালে থেকেই অচিরে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন ঘোষণা করা হবে বলে হংকার দিলেও শেষ পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, পদযাত্রাসহ প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের সাফল্য দেখে গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
এরপর থেকেই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করছে বিএনপি। সম্প্রতি দলটির সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান। দ্বিতীয় কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ও বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সহিংসতা ছিল লক্ষণীয়। অনেকে মনে করেন, পুলিশি বাধার মুখে রাজপথে কর্মসূচি পালনে বিএনপির ‘দুর্বলতা’ আবারো স্পষ্ট হয়েছে।
মূলত ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির পর কিছু ছেদ পড়েছে বিএনপির এক দফার আন্দোলনে। এক দফা দাবিতে এ পর্যন্ত আর কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। অবস্থান কর্মসূচি পালনে কী কী দুর্বলতা ছিল, তাও চিহ্নিত করেছে বিএনপি। সে অনুযায়ী আগামী দিনের কর্মসূচি সফলে করণীয় নিয়ে অকেকটা কৌশলী হতে দলের হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি নেতারা জানান, সরকারের অবস্থান ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেকোন সময় আন্দোলনের গতিবিধি পরিবর্তন হতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সবারই নিজস্ব কিছু কৌশল আছে। আমরাও আমাদের কৌশল মতো এগুচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এ সরকার দেশের ১৮ কোটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। জাতিকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতেই আমাদের সংগ্রাম। জনতার আন্দোলন কখনই ব্যর্থ হয়নি, এবারও হবে না।’
দলটির একটি সূত্র জানায়, নানা কারণে আগস্টে কঠিন কর্মসূচি দেবে না দলটি। তবে চলতি মাসে ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ, অবস্থান, পদযাত্রা, রোডমার্চের মতো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি আসতে পারে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে চূড়ান্ত কর্মসূচি আসবে সেপ্টেম্বরে। ওই সময়ে টানা কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হোঁচট খাওয়াসহ অতীতের ব্যর্থতাকে নজরে রেখে কর্মসূচি করবে দলটি।
অন্যদিকে বিগত কয়েকদিনের কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ও দায়িত্বশীল নেতাদের ভূমিকারও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। মহাসমাবেশে কয়েক লক্ষাধিক লোকসমাগম ঘটলেও পরের দিন ২৯ জুলাই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কম। ঢিলেঢালা, গরহাজির ও অনুপস্থিত নেতাদের সম্পর্কে দলের ভেতর চলছে আলোচনা-সমালোচনা। নিষ্ক্রিয় আর ব্যর্থ নেতাদের তালিকা করে তাদের চিহ্নিত করার তাগাদাও দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে দলটি। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির পাশাপাশি দেশি-বিদেশিদের জনমতও পক্ষে রাখতে চাচ্ছেন দলের হাইকমান্ড।
এই মুহূর্তে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ রাখার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে এক দফার আন্দোলন সফল করতে সমমনাদের পরামর্শও নিয়েছেন নেতারা। এসব বৈঠকে সেপ্টেম্বর মাসেই রাজপথে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের বার্তা দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে লাগাতার কর্মসূচিতে যাবে দলগুলো। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
আন্দোলন ও কৌশল প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছি। অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা জানতে পারবেন।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং লিয়াঁজো কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাজনীতিতে কৌশল থাকবেই। সরকারের মন্ত্রিসভা আজকে যেমন চাপে পড়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাদ দিয়ে কাঁটা ছাড়িয়ে কম্বল বিছালো‘। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অত্যাচারিত হয়ে কিছু কৌশলতো নেবেই। কৌশলও পরিবর্তন হবে। পরিবর্তিত কৌশল হিসেবেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
আন্দোলন ও কৌশল প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছি। অল্প সময়ের মধ্যে জানতে পারবেন।’
Leave a Reply