অনলাইন ডেস্ক : জেমকন গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং তার ভাই কাজী আনিস আহমেদ ও কাজী ইনাম আহমেদ ২৫৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন লন্ডনে। বাংলাদেশ থেকে এ অর্থ কীভাবে পাচার করা হয়েছে তা তদন্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
যুক্তরাজ্যের কোম্পানিতে বিনিয়োগের এই অর্থ এসেছে সিঙ্গাপুর এবং দুবাই থেকে। দুবাইয়ের যে কোম্পানি থেকে যুক্তরাজ্যে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে সেটির মালিক কাজী আনিস আহমেদ। সিঙ্গাপুরের যে কোম্পানি থেকে অর্থ গেছে সেটির নাম গ্লোবাল বিজ ইমপোর্ট এক্সপোর্ট। সিঙ্গাপুরের অ্যাকাউন্টিং এবং করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটির নথি অনুসারে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ক্লিয়ারিং হাউস বা কমিশন এজেন্ট। কোম্পানিটির মালিক শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান রিপন নামে একজন বাংলাদেশি নাগরিক, যার ঠিকানা ঢাকার মালিবাগ। কিন্তু জেমকন গ্রুপের ব্যাংক স্টেটমেন্টে বাংলাদেশ থেকে একটি পয়সাও যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরের তথ্য পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসে একটি শুনানিতে কাজী অ্যান্ড কাজী টি কোম্পানির মালিক জেমকন গ্রুপের নিয়ন্ত্রক কাজী নাবিল আহমেদ, কাজী আনিস আহমেদ ও কাজী ইনাম আহমেদ বলেছেন আমরা যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানির একমাত্র বিনিয়োগকারী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় কাজী নাবিল আহমেদের বিদেশে কোনো ব্যবসা নেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের আদালতের শুনানিতে তিনি বলেছেন লন্ডনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। পাচারের অর্থে কোম্পানি খোলার বিষয়টি গোপন রাখার জন্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং তার দুই ভাই যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্যবসায়িক অংশীদারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৭১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদেশে অর্থ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত কোম্পানিগুলোর তালিকায় জেমকন গ্রুপের নাম নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে নাবিলের সম্পদের তদন্ত করছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামা অনুসারে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর নাবিলের আয় বেড়েছে ১০০০ শতাংশের বেশি। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিশ্লেষণ অনুসারে, কাজী নাবিল আহমেদের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৯০০ কোটি টাকা। শীর্ষ ঋণ গ্রহীতা সংসদ সদস্যের তালিকায় নাবিলের অবস্থান পঞ্চম। ব্রিটিশ কোম্পানি তেঁতুলিয়া ইউকে লিমিটেড ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ডের (৩৯.৫ কোটি টাকা) একটি আর্থিক বিবরণী সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তেঁতুলিয়া ডেলাওয়ার নামের একটি বড় কোম্পানির শাখা যুক্তরাজ্যের কোম্পানিটি। বাংলাদেশ থেকে চা আমদানি এবং বাজারজাত করে কলারাডোর ডেনভেরে অবস্থিত তেঁতুলিয়া ডেলাওয়ার। কাজী নাবিল আহমেদ, আনিস আহমেদ এবং ইনাম আহমেদ ২০০৭ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে মার্কিন নাগরিক লিন্ডা আপেল লিপসিয়াসকে অংশীদার হিসেবে যুক্ত করেণ। ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিন ভাই ১৮ মিলিয়ন ডলার (২১৫ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে। তেঁতুলিয়া কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কাজী নাবিল আহমেদ এবং তার ভাই কাজী আনিস আহমেদ ও কাজী ইনাম আহমেদ কত টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তা তদন্ত করবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। শুধু জেমকন গ্রুপ একা নয়, আরও কে কত টাকা পাচার করেছেন সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা এগুলো নিয়ে কাজ করছে।
Leave a Reply