অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীতে ত্রাস সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ লিডারসহ ২০ সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে- কিশোরগ্যাং ‘ফয়েজ-আরাফাত’ গ্রুপের সাতজন, ‘সিয়াম’ গ্রুপের চারজন, ‘অনিক’ গ্রুপের চারজন ও ‘কুনিপাড়া স্কোয়াড’ গ্রুপের পাঁচজন।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার মো. শামীম হোসেন।
তিনি জানান, রবিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজধানীর কদমতলী ও হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।
কিশোর গ্যাংয়ের আটক সদস্যরা হলো- ইয়াসিন আরাফাত, রাশেদ হাজারী, রাসেল ইসলাম, তামিম মিয়া, রাতুল হাসান, মমিনুল ইসলাম হৃদয়, মো. রাকিব, সাইফুল ইসলাম সিয়াম, আশিকুল ইসলাম স্বাধীন, মো. ফয়সাল হোসেন রাব্বি, মো. নাঈম, হাসান আহমেদ অনিক, আমিনুল ইসলাম, মো. রাফিন, আল আমিন, মো. রনিউজ্জামান, মো. রাকিব, মোহন মিয়া, নাঈম মিয়া ও নাহিদ।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি চাপাতি, একটি ছুরি, একটি শাবল, তিনটি ছোরা, একটি হাসুয়া, চারটি চাকু, দুইটি ক্ষুর, দুইটি হেক্সোব্লেড, ২৫ পুরিয়া গাঁজা, ছয়টি মোবাইল এবং চাঁদা উত্তোলন করা চার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়, রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় ফয়েজ-আরাফাত কিশোরগ্যাং গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপটি সন্ত্রাসী মো. ইয়াসিন আরাফাত ও তার ফুফাতো ভাই ফয়েজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল।
এর মধ্যে এ গ্রুপের অন্যতম হোতা আরাফাত এ অভিযানে আটক হয় এবং ফয়েজ বর্তমানে রিহ্যাব সেন্টারে আছে। আটক ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, মারধর, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
এছাড়া হাতিরঝিল এলাকায় সিয়াম এবং অনিক গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম সিয়াম এবং হাসান আহমেদ অনিকের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা রাজধানীর হাতিরঝিল এবং এর আশপাশের এলাকায় সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল দ্বারা বিকট শব্দ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। এ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যেতো। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতিরঝিল এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়া তারা মাদক সেবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল।
তিনি জানান, রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার কুনিপাড়া স্কোয়াড গ্রুপটি হাতিরঝিল ও এর আশপাশের এলাকায় হোতা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। হোতা রনিউজ্জামান অনলাইনভিত্তিক অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেলিগ্রামে নোটকয়েন নামক ফিচার ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অনলাইন জুয়ারিদের সঙ্গে জুয়া খেলতো। এ গ্রুপের সদস্যরা ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং বিভিন্ন মানুষকে হুমকি, মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছে। এছাড়াও তারা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো।
আটক কিশোরগ্যাং সদস্যরা পেশায় অটোরিকশা চালক, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী, দিনমজুর, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। আটকদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply