জেএন নিউজ ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি যে কারো ওপর হতে পারে। তবে কোনো ব্যবসায়ীদের ভিসা বাতিল হলেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা করোনার সময় কোনো দেশে যেতে পারিনি। এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সেক্ষেত্রে বলা যায়, ভিসা বাতিল হলেও বিকল্পভাবে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া যাবে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।
আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপর স্যাংশন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর পেমেন্টে কয়েকটি ব্যাংকের ওপর স্যাংশন হয়েছে, তবে সেটা অন্য কোনোভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে।’
১০ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ৩২০ বিলিয়ন ডলার
বিজেএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত ১০ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩২০ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অংকে প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা। আর গত ৫ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অংকে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। এই টাকাগুলো কিন্তু আমরা রপ্তানি করে আমাদের দেশের মধ্যেই এনেছি এবং এই যে রপ্তানিটা আমরা করতে পেরেছি, এটা কিন্তু সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য আমাদেরকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘আজ আমাদের পোশাক শিল্প ৪৭ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। শুধু বিলিয়ন ডলার না, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বৃহত্তর অর্থনীতিতে আমাদের যে আরও ট্রানজেকশনগুলো আছে সবকিছুই। এই বিষয়গুলো সব সময় গভীরভাবে দেখা হয় না। এই শিল্পের মাধ্যমে যে ক্যাপিটাল ফর্মেশন হচ্ছে, সেটি আরও অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমে ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, এ রকম শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের চিঠি, এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি কার স্বার্থে করা হয়েছে? আমরা মনে করি এটা আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনো তদন্তই হয়নি সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্প খাত নিয়ে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে। তারা যদি অসাধু তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিচারের আওতায় আনবে। উল্লেখিত বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।
এ শিল্পটিকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের একান্ত প্রত্যাশা পোশাক শিল্পের বিষয়ে যে কোনো প্রতিবেদন, যেখানে কিনা অংশীজনদের মতামত নেই, কোনো ভ্যালিডেশন নেই, সেই প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকবেন। একটি শিল্পের বিরুদ্ধে ঢালাও ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী, সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ উদ্যোক্তারা।
Leave a Reply