1. admin@jn24news.com : admin :
  2. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

মেয়েদের পর্নো ছবি ও ভিডিওর কারবারে কোটি টাকা, পরিবার জানত ফ্রিল্যান্সিং, গ্রেপ্তার ৯

  • Update Time : সোমবার, ২২ মে, ২০২৩
  • ৯৬ Time View

জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কায়দায় অল্প বয়সী মেয়েদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও সংগ্রহ। এরপর সেগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল। দাবি করা টাকা না দিতে পারলে দফায় দফায় চাপ দিয়ে আরও পর্নো সংগ্রহ। পরে দেশ-বিদেশে বিক্রি করা হয় এসব। এমন কারবার করা চক্রের একজনেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে নয়জন তরুণকে। অথচ তাদের পরিবার জানত তারা ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানানো হয়। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এই অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, গ্রেপ্তার নয়জন টেলিগ্রামে ‘পমপম’ নামে একটি গ্রুপ পরিচালনা করত। এই গ্রুপে এডমিন ছিল ‘মার্ক সাকারবার্গ’ নামে টেলিগ্রাম আইডি। চক্রের সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মত দেশের অসংখ্য ক্রেতার কাছে মেয়েদের আপত্তিকর ছবি, ভিডিও বিক্রি করত।

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ঢাকা থেকে এই চক্রের মূল হোতাসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. আবু সায়েম ওরফে মার্ক সাকারবার্গ (২০), (সাবেক শিক্ষার্থী- ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শ্যামলী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম), বেসরকারী চাকরিজীবী মো. মশিউর রহমান শুভ (২৬), মো. সাহেদ খান (২২) (শিক্ষার্থী, সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, সিলেট), কেতন চাকমা (২০) (শিক্ষার্থী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়), মো. নাজমুল হাসান সম্রাট (২২) (শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি), মো. মারুফ হোসেন (৩৪) (বেসরকারি চাকরিজীবী, সাবেক শিক্ষার্থী- ফাইন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা), শাহরিয়ার আফসান অভ্র (২৪), জুনাইদ বোগদাদী শাকিল (২০) (শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ) ও বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জসীম উদ্দীন (৩৮)।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ‘মার্ক সাকারবার্গ’ নামে টেলিগ্রাম আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া অসংখ্য টেলিগ্রাম গ্রুপ, বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের কয়েক হাজার ন্যুড ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার নয়জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গত ১৬ মে মামলা করা হয়েছে। পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা হয়।

সিআইডি প্রধান জানান, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার কোমলমতি তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল, একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে তারা।

অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চক্রটিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছিলেন, তাদের ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করে ‘পমপম’ নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ তাদের গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তাদের ব্লাকমেইল করছে। অর্থ দাবি করছে। অর্থ দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকান্ড করতে বাধ্য করছে। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে ভিকটিমদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্যসহ লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপপগুলোতে ভাইরাল করে দিচ্ছে। আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে যে কেবল টাকা আয় করে তা নয়, চক্রটি ওইসব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করেছে।

মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মত দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্পবয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ক্রয় এবং সংরক্ষণ করে থাকেন।

আবু সায়েম থেকে ‘মার্ক-সাকারবাগ’

চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক-সাকারবাগ নামে এক ব্যক্তি। শুরুতে খুবই চতুর এই মার্ককে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়। মার্কের আসল নাম আবু সায়েম। বেকার সায়েম থাকে চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী তার বয়স ২০ বছর। তিনি শ্যামলী পলিটেনিক ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম থেকে ইলেকট্রিক্যাল এ ডিপ্লোমা করেছেন। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

এরই মধ্যে আরাফাত নামে এক ভুক্তভোগী এবং তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ‘পমপম’ গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ায় ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক-সাকারবার্গ ও তার দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফী এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টে একটি মামলা করেন।

যেভাবে একে একে ধরা পড়ে নয়জন

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মার্ক ওরফে সায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার ঘনিষ্ট দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে আবু সায়েমই মার্ক সাকারবাগ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যতগুলো চ্যানেল এবং গ্রুপ আছে তার এডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। এডমিনদের কাজ ছিল মার্কের হয়ে নতুন নতুন কন্টেন্ট যোগাড় করা। নতুন কন্টেন্ট পেতে তারা ফেইক এনআইডি বানিয়ে টার্গেটের ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম আইডি হ্যাক করতো এক সময়।

প্রেম থেকে বিরোধ এবং যেভাবে আসে ছবি-ভিডিও

ইতোমধ্যে ছবি ভিডিও সংগ্রহ করার সহজ পথও হয়ে গেছে এই চক্রের। ভূক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকেরাই নতুন নতুন ছবি-ভিডিও দিচ্ছে। অর্থাৎ সুসময়ে প্রেমিকার যেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত তারা ক্যামেরাবন্দি করেছে, সেগুলোই প্রতিশোধের নেশায় তুলে দেয় মার্ক-সাকারবার্গদের গ্রুপে। মার্ক তার এডমিনদের দিয়ে সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে, ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের প্রমো বানিয়ে আপলোড করে তার গ্রুপগুলোতে। প্রমো দেখে যারা ফুল-ভার্সন দেখতে চায়, তাদের এক থেকে দুই হাজার টাকার প্রিমিয়াম সার্ভস কিনতে হয়।

মার্ক ওরফে সায়েম, অভ্র এবং শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ডিভাইস তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গের বিভিন্ন পেজের এডমিনদের আসল পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দেখা যায়, তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। মশিউরের দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কন্টেন্ট সেভ করে রাখা একং নানা প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেওয়া। মশিউরের চট্টগ্রামের একটি ফিশিং কোম্পানীতে চাকরি করে। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে কর্ণফুলি এলাকা থেকে প্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী জসীমকেও।

পুলিশ বলছে, সায়েম এবং মশিউরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- এই এডাল্ট গ্রুপগুলোর এডমিনদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছে। ফলে তাদের বেইলি রোড এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে গেটটুগেদারের ফাঁদ পাতা হয়। ফাঁদে পা দিয়ে একে একে গ্রেপ্তার হয় গুরুত্বপূর্ণ এডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ এবং মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

মার্ক-সারারবার্গ এবং তার সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোয় সাবস্ক্রাইবের সংখ্যা প্রায় সোয়া চারলাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে তাদের। অন্যদিকে মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা ফি দিয়ে তাদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে সাতশ মানুষ। তাদের বিস্তারিত তথ্য এখন পুলিশের হাতে। তরুণীদের এসব ছবি-ভিডিও কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান সিআইডি প্রধান।

ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার করুণ আকুতি মেয়েদের

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এই কাজটি ছিল ভীষণ স্পর্শকাতর একটি কাজ। ফলে তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগী কিশোরী মেয়েদের কান্না, তাদের আপত্তিকর ভিডিও গ্রুপগুলো থেকে সরিয়ে নিতে এডমিনদের প্রতি করুণ আকুতি, আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমরা জেনেছি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বোনের ভিডিও সরিয়ে নিতে ভাইয়ের কান্নাও আমাদের চোখে পড়েছে। চোখ আর্দ্র হয়েছে। ভুক্তভোগী কিশোরীদের অনেকেই এই অসহায়ত্বের কথা কাউকেই বলতে না পেরে ক্রমেই মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়েছে।’

ভুক্তভোগী সন্তানকে একা না করে পাশে থাকুন

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে, একান্ত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি এবং তা আদান-প্রদান করে তারা যেমন ভুল করেছে, তেমনিভাবে সেই ভুল করে বিপদে পড়া কঠিন সময়ে তারা নির্ভরযোগ্য কাউকে পাশে পায়নি, না পরিবার, না অন্যান্য স্বজন। ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তারা কোনো আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি। সংকট ক্রমে বেড়ে বেড়ে মহীরুহ হয়ে গেছে।

অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘সন্তানের ভুলে তাকে একা করে না দিয়ে পাশে থাকুক, আইনের আশ্রয় নিন। অপরাধী যত শক্তিশালী হোক না কেন আমরা তাকে আইনের আওতায় আনবো।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Breaking News
Theme Customized By BreakingNews