জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: ঔরসজাত মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে চট্টগ্রামে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন এক বাবা। এই ব্যক্তি বাবা-মেয়ের পবিত্র সম্পর্ককে কলুষিত করেছেন; তার কর্মকাণ্ডে পৃথিবীর সব পুরুষের প্রতি তার মেয়ের ক্ষোভ ও অবিশ্বাস সৃষ্টির আশঙ্কা করেছেন আদালত। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, এ ঘটনার কারণে ভুক্তভোগী শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাপন ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই তাকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন। দণ্ডিত মো. নাছির মোল্লা (৩৭) চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর পতেঙ্গার ঢেবার পাড়ে একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল নাছিরের ১২ বছর বয়সী মেয়ে বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নগরীর পতেঙ্গা থানায় মামলা করে।
মামলার এজাহারে কিশোরী অভিযোগ করেন, তার মা সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতেন। বাবা বাসায় থাকতেন। তারা দুই বোন। ছোট বোন বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। কিশোরী মাদারবাড়িতে তার নানার বাড়িতে থাকত। ঘটনার পাঁচ মাস আগে সে নানার বাড়ি থেকে মা-বাবার বাসায় চলে আসে।
২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ভোর সোয়া ৫টার দিকে তার মা কারখানায় চলে যান। কিশোরীর বোন এক রুমে ঘুমাচ্ছিল। সে নিজের রুমে গিয়ে দরোজা বন্ধ করে দেয়। পাঁচ মিনিট পর তার বাবা দরোজায় টোকা দিয়ে মোবাইল চার্জ দেয়ার কথা বলেন। সে দরোজা খুলে মোবাইল নিয়ে আবার বন্ধ করে দেয়। দশ মিনিট পর আবার নাছির মোবাইল ফেরত চান। কিশোরী মোবাইল দিতে গেলে তাকে জোরপূর্বক রুমে আটকে ধর্ষণ করেন নাছির।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় কিশোরী অনুনয় করে বলেন- তুমি আমার বাবা, তুমি আমার সঙ্গে এ ধরনের কাজ কেন করছ? নাছির জবাব দেয়- তুই আমার মেয়ে, এর গ্যারান্টি কী, তোর মা জানে, তোর আসল বাবা কে।
এদিকে কিশোরীর করা মামলায় নাছির মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। তদন্ত শেষে পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তার ২০২১ সালের ২৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। আসামির সাফাই সাক্ষ্য ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষ মোট আটজনের সাক্ষ্য নেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন জানান, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তিন লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারা অনুযায়ী- ধর্ষণের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত কারাদণ্ড। ১২ বছর বয়সী শিশুটি আসামি নাছির মোল্লার ঔরসজাত কন্যা হওয়া স্বত্ত্বেও সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিস্কে তাকে ধর্ষণ করেন এবং ভিকটিমকে নিজের কন্যা হিসেবে অস্বীকার করেন। বাবা কর্তৃক ধর্ষণের ফলে শিশু ভিকটিমের পৃথিবীর সব পুরুষের প্রতি ক্ষোভ ও অবিশ্বাস সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ভুক্তভোগী শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাপন ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতে বাবা ও কন্যার সম্পর্ক পবিত্র এবং শ্বাশ্বত। কন্যা তার বাবার নিকট সর্বাধিক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। আসামি তার ঔরসজাত কন্যাকে ধর্ষণ করে শ্বাশ্বত, পবিত্র এই সম্পর্ককে কলুষিত করেছেন এবং পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন ও আস্থা-বিশ্বাসে আঘাত করেছেন। এর ফলে আসামির দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান সমীচীন হবে বিধায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো।
Leave a Reply