জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আরও পাঁচ ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার সন্ধ্যায় সিআইডির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম, ডা. লুইস সৌরভ সরকার, ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া, ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল এবং ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা।
চলতি বছরের ১৩ আগস্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাতজন ডাক্তার সহ প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আটজন তাদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডাইরি উদ্ধার করা হয়। ওই ডাইরিতে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম পাওয়া যায়।
সিআইডি জানায়, এ ঘটনার পরে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন এবং প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল উৎপাটনে ও অবৈধ উপায়ে চিকিৎসকের মতো মহান পেশায় ভর্তি হওয়া ডাক্তারদের সন্ধানপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্যে সিআইডির কার্যক্রম চলমান রাখার ঘোষণা দেন। পরে খুলনার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে করে মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতা সহ মোট পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডির সাইবার টিম। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন, দুইটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক। ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে জড়ান কোচিং ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং খুলনা। তিনি নিজেকে ডাক্তার তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচয় দেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য শত শত শিক্ষার্থীকে এভাবে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এবং তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্লাট, জমি, মাছের ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ডা. তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দ প্রতিবেদনে এর আগেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারী সংস্থায় মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুসুজ্জামান খান তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও তাকে বাসায়ও পড়াতেন তারিম। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের তিনজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও সে চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সামিনেশনের সব সাবজেক্টেই ফেইল করেছে। পরবর্তীতে একাধিকবারের চেষ্টায় সে পাশ করেছে। লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তি জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা দুইজনেই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র ক্রয় করে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়।
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে গত ৭ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২২(২)/৩৩(২) তৎসহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৪/১৩) ধারায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply