জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: মানবাধিকার সাংবাদিকতার বিকাশে চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ চার দফা সুপারিশ করা হয়। এটি উপস্থাপন করেন ‘পরিপ্রেক্ষিতে’র নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর।
সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের মানবাধিকার সম্পর্কিত আইন ও নীতি অবহিতকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানবাধিকার বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের নিত্য চর্চার বিষয়। এ কারণে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের কাজ সমমুখী। বৈশ্বিক শান্তি, সহাবস্থান, সহযোগিতা ও সর্বাত্মক কল্যাণের জন্যই যথার্থ মানবাধিকার চর্চা প্রয়োজন। মুক্ত গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সুরক্ষা একে অপরের পরিপূরক। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কমিশন নিবিড়ভাবে করে থাকে। এ পর্যন্ত দেশের যে প্রান্তেই সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছে কমিশন সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজেই ছিলেন গণমাধ্যম-বান্ধব এক রাজনৈতিক নেতা। গণমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর ছিলো এক নিবিড় সম্পর্ক। ’
সভায় মানবাধিকার সাংবাদিকতার বিকাশে যে চার দফা পেশ করা হয়-
১. মানবাধিকার সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেন মানবাধিকার বিষয়ে রিপোর্ট প্রস্তুতির আগেই একজন গণমাধ্যমকর্মী বিষয়টি সম্পর্কিত আইন, নীতি সম্পর্কে জানেন। এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। মানবাধিকার সাংবাদিকতা বিষয় একটি নিয়মিত ফেলোশিপ এখন সময়ের দাবি।
২. মানবাধিকার সাংবাদিকতার জন্য আইনি সুরক্ষা দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে যেন সাংবাদিক হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সঠিক তথ্য প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে একজন গণমাধ্যম কর্মী সঠিক তথ্য পান না। এই প্রতিবন্ধকতা সরাতেই হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে একটি তথ্য ভান্ডার তৈরীর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
৪. নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা। মানবাধিকার সাংবাদিকতা করেন এরকম গণমাধ্যম কর্মীদের একটি ফোরাম বা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা তথ্য আদান-প্রদান, প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত মান উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা করবেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, সম্মানিত সদস্য ড. তানিয়া হক ও কংজরী চৌধুরী, সচিব সেবাষ্টিন রেমা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলম ও পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক।
সভার শুরুতে কমিশনের পরিচিতি তুলে ধরেন কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক।
কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদুল্লাহ কায়সার, শহীদ সাবের, সিরাজুদ্দীন আহমেদ, সেলিনা পারভীনসহ অগণিত সাংবাদিক প্রাণ দিয়েছেন। আমরা তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে জনগণ। যে দেশে জনগণ মানবাধিকারের প্রশ্নে যতটা সচেতন সেই দেশ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষায় তত এগিয়ে। বিশ্বের সব মহান ও জনপ্রিয় নেতাই ছিলেন মানবাধিকারের পক্ষে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আব্রাহাম লিংকন ও নেলসন মেন্ডেলা কিংবা মহাত্মা গান্ধী তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।’
বিশেষ অতিথি শ্যামল দত্ত বলেন, ‘গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কীভাবে এক হয়ে কাজ করলে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, আমরা পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে নির্মাণ করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ৯ মাসে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। আবার ৭৫ এর আগস্টে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। এ ঘটনাগুলো ইতিহাসে বর্বরোচিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত।’
সভায় মানবাধিকারের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও আইনি সুরক্ষা, গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ পাশাপাশি বক্তারা জনগণের মাঝে অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি, সংবিধান, আইন ও অধিকার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞানের প্রসারে গণমাধ্যমকে সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
মতবিনিময় সভায় একটি উম্মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিজ নিজ মন্তব্য উপস্থাপন করেন।
Leave a Reply