জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে অনুপস্থিত থাকায় কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে পারব না। এখানে (সংসদে) অর্থমন্ত্রী কখনও থাকেন না। তিনি কোনো কথাই শুনতে চান না। কোন মন্ত্রীর কী দায়িত্ব, সেটাও তিনি জানেন না। কে কী কাজ করেন, তার কোনো জবাবদিহিও নেই। ব্যাংকের যেমন জবাবদিহি নেই, মন্ত্রীদেরও জবাবদিহি নেই।’
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ এসব বলেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী বা ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
অর্থ পাচার বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে এই সংসদ সদস্য বলেন, কোথাও জবাবদিহি না থাকলে দেশ কীভাবে চলবে? সবাই প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভার দেন। বলেন প্রধানমন্ত্রী এটা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তো ব্যাংকের লাইসেন্স দেন, আর সেটা কীভাবে চলবে তা ঠিক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ। তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে, কেন জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, কে দায়ী এসবের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।
ফিরোজ রশীদ বলেন, সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন। পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও একাধিক বাড়ি কিনে বসবাস করছেন তিনি। তিনি একা এ কাজ করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত প্রত্যেক ব্যাংকে অডিট করে। এক হাজার কোটি টাকা তো একদিনেই নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কী করল?
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে কৃচ্ছতা সাধন করতে বলেছেন এ কথা জানিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, রমজানে মাসে ইফতার পার্টির নামে অনেক টাকা পয়সা খরচা হয় তা মাফ করে দিয়েছেন, তিনি নিজেও করেননি এবং সবাইকে করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু ইফতারে কী পরিমাণ টাকা যেত, বড়জোর ১০০ কোটি টাকা যেত, এটা তো রোজদারদের জন্য ইফতার। আর এখানে সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন।
টাকা পাচারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো প্রতিবাদ করেনি অভিযোগ তুলে ফিরোজ রশীদ বলেন, তারা জানেন এক হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। এখানে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হলে তারা নড়েচড়ে বসে। ১০ হাজার কোটি টাকা হলে আরেকটু নড়েচড়ে বসে। জনগণের টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ব্যাংকগুলো পারিবারিক হয়ে গেছে। এগুলো এখন জনগণের ব্যাংক নেই। আমরা টাকা রাখি ঠিকই। ব্যাংকের মালিকদের চাকর-বাকরদেরও কোনো অসুখ হলে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক চলে যাবে চিকিৎসার জন্য।’
এর আগে বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। মন্ত্রীর বিবৃতির সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বিরাট, লম্বা-চওড়া বিবৃতি শোনালেন, কত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, উনি নিজে দিনরাত পরিশ্রম করে আগুন নিভিয়েছেন। আসলে আগুন নেভান নাই, আগুন আজও জ্বলছে।
‘বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারে পানি ছিটিয়েছে, পানি পড়তে পড়তে কিছু আর থাকে না। ওইটা অক্সিজেন হয়ে যায়। কোনও রকম তারা গিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার রক্ষা করতে পারছেন। একটা দোকানদারও রক্ষা পায়নি। এটা হলো আসল কথা। আপনাদের শত চেষ্টার পরও কোনো দোকান রক্ষা পায়নি। আর যত বেশি লোকজন গেছে, ততবেশি লুটপাট হয়েছে। এটা স্বীকার করেন না কেন? আগে ব্যবস্থা নিলে লুটপাট হতো না। আপনি বিরাট এক ফিরিস্তি দিয়েছেন, কিন্তু মানুষ রক্ষা পায়নি। চিকিৎসা ভালো হয়েছে, কিন্তু রোগী মারা গেছে, ‘ অভিযোগ করেন ফিরোজ রশীদ।
মন্ত্রীদের সমালোচনা করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মন্ত্রীরা একেক সময় একেক কথা বলেন। আমরা একটা সংবাদ পেলাম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে তিনি রাজনৈতিক চর্চা করতে পারবেন। আরেক মন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়া শর্ত দিয়েছেন রাজনীতি করবেন না। আপনারা একেক সময় একেক আইনের ব্যাখ্যা দেন।’
Leave a Reply