অনলাইন ডেস্ক : ভারতের রাজধানী শহর দিল্লির আলোচিত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টটরেট (ইডি)।
বৃহস্পতিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার মোবাইল জব্দ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডির কর্মকর্তারা। এর ঘণ্টা দুয়েক পরেই তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়।
এদিন সকালে দিল্লি হাইকোর্ট কেজরিওয়ালকে মদ বিক্রির নীতিমালা সংক্রান্ত মামলায় (আবগারি) সুরক্ষা দিতে অপারগতার কথা জানায়। আদালত তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ইডিকে জবাব দিতে বলে এবং এর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে আগামী ২২ এপ্রিল। পরে বিকালেই কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
আদালত কর্তৃক কেজরিওয়ালকে সুরক্ষা দিকে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইডির একটি দল তার বাসভবনে ঢোকে। সেখানে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে ইডির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এনডিটিভি বলেছে, ইডি দলে ১২ কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের কাছে কেজরিওয়ালের বাসভবনে তল্লাশির হুকুম (সার্চ ওয়ারেন্ট) রয়েছে। তারা আম আদমি পার্টির প্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন জব্দ করেছেন। বাসভবনের অভ্যন্তরে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদও করছেন ইডি কর্মকর্তারা। বাসভবনের বাইরে দিল্লি পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যের পাশাপাশি সিআরপিএফের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়িতে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গেছে এবং কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাতে মনে হচ্ছে, সেখানে বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে।’
এই মামলায় ইডির নয়টি সমন এড়িয়ে গেছেন আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান। গত সোমবার ইডির করা দিল্লি জল বোর্ডে কথিত অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচার মামলার পৃথক আরেকটি সমনেও তিনি হাজির হননি।
আবগারি মামলায় তেলেঙ্গানার বিআরএস নেতা কে কবিতাকে গ্রেপ্তারের এক সপ্তাহের মধ্যে ইডির পক্ষ থেকে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হলো। কবিতাকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমবারের মতো এ মামলায় কেজরিওয়ালকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নাম যুক্ত করা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে ইডি কেজরিওয়ালকে প্রথম সমন জারি করে ২ নভেম্বর হাজির হতে নির্দেশ দেয়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি গ্রেপ্তার করতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলায় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে গ্রেপ্তার করে ইডি। আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংকে গত অক্টোবরে হেফাজতে নেওয়া হয়।
কেজরিওয়াল একাধিকবার দাবি করেছেন, বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ইডি তাকে গ্রেপ্তার করে আম আদমি পার্টিকে দমাতে চায়। আরও বেশ কয়েকটি বিরোধী দলও বিজেপির বিরুদ্ধে ইডিকে নিজ স্বার্থে কাজে লাগানোর বলে অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, নেতাদের বিরুদ্ধে এই সংস্থাকে ব্যবহার করছে বিজেপি। আগামী ১০ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন। এর আগেই নেতাদের গ্রেপ্তারে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
কেজরিওয়াল কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি সরকার তাকে গ্রেপ্তার করবে। আবগারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) দিয়ে বারবার তাকে সমন করা হচ্ছে।
গত রোববার ইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেজরিওয়ালকে কথিত মদনীতি জালিয়াতির একজন ষড়যন্ত্রকারী বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, ইডির তদন্তে দেখা গেছে কে কবিতার সঙ্গে অন্যদের নিয়ে আপের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মনীশ সিসোদিয়া দিল্লির আবগারি নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সুবিধা পাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। এ সুবিধা পেতে কবিতা আম আদমি পার্টির নেতাদের ১০০ কোটি রুপি দিয়েছেন।
Leave a Reply