জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: ২০১১, ২০১৫ এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। আশা ছিল এবার ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতে ভারতেকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করবে টাইগাররা। কিন্তু হলো তার উল্টো। বাংলাদেশকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিলো ভারত। এরফলে টানা তিন ম্যাচে হারালো বাংলাদেশ। আর এই জয়ে বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে জয় তুলে নিলো স্বাগতিক ভারত।
আজ টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওপেনাররা দারুণ শুরু করেন। প্রথমে রান না পেলেও উইকেট ধরে রাখেন। এরপর খোলস থেকে বেরিয়ে এসে ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হন তারা। দুই ওপেনারই আজ ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন। আজ বাংলাদেশর ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৯৩ রান। ওপেনাররা ভালো শুরু এনে দিলেও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় নিজেদের ইনিংস বেশদূর নিয়ে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। মিডল অর্ডারে শান্ত, মিরাজ, হৃদয় সবাই ছিলেন ব্যর্থ। একমাত্র মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ আজ ছিলেন ব্যতিক্রম। মুশফিকের ৩৮ আর শেষের দিকে মাহামুদউল্লাহর ৩৬ বলে ৪৬ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান তুলে বাংলাদেশ।
২৫৭ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশর বোলারদের ওপর তান্ডব চালানো শুরু করেন ভারতীয় দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল। রোহিত শর্মা ৪৮ রানে ফিরে গেলেও আজ অর্ধশতক তুলে নেন শুবমান গিল। আর সেঞ্চুরি তুলে নেন বিরাট কোহেলি। শেষ পর্যন্ত ৪১ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ভারত। ৭ উইকেটের বিশাল হার সঙ্গী হলো বাংলাদেশর।
ভারতের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন রোহিত শর্মা। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন শুবমান গিল।
এই জুটিতে ভর করে ভারত আজ দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে ৯ ওভারে। আর প্রথম পাওয়ার প্লেতে তুলে নেয় ৬৩ রান। মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ চেষ্টা করেও ভাঙতে পারছিলেন না এই জুটি।
দলের জয়ের দিনে ৫৫ বলে ৫৩ রান শুভমান গিল
দলের জয়ের দিনে ৫৫ বলে ৫৩ রান শুভমান গিল
অবশেষে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙলেন হাসান মাহমুদ। ৪০ বলে ৪৮ রান করা রোহিত শর্মা তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে গেলেন সাজঘরে। তার বিদায়ে ৮৮ রানে ভাঙে ভারতের ওপেনিং জুটি।
রোহিত শর্মার বিদায়ের পর কোহলিকে নিয়ে জুটি গড়েন শুবমান গিল। এই দুইজনও তান্ডব চালাতে থাকেন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর।
এরই মাঝে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন শুবমান গিল। ৫২ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৫ টা চারের মার ও ২ টা ছয়ের মার।
অর্ধশতক তুলে নিলেও নিজের ইনিংসকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি গিল। ৫৫ বলে ৫৩ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
শুভমান গিলের বিদায়ের পর শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন বিরাট। এর মাঝেই তিনি তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ৪৮ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে চারটি চার ও একটি ছয়ের মার।
বিরাট হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেও শ্রেয়াস আইয়ার বেশি সময় থাকতে পারেননি ক্রিজে। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি ফিরে যান। আউট হওযার আগে করেন ২৫ বলে ১৯ রান।
শ্রেয়াস আইয়ারের বিদায়ের পর লোকেশ রাহুলের সঙ্গে জুটি গড়েন বিরাট। এই জুটিই শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। বিরাট অপরাজিত থাকেন ১০৩ রানে আর লোকেশ রাহুল অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশের হয়ে আজও ওপেনিংয়ে নামেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। শুরু থেকে এই দুই ওপেনার দেখেশুনে খেলতে থাকেন। শুরুর দিকে রান নিতে না পারলেও তাড়াহুড়ো না করে উইকেট ধরে রাখেন এই দুই ওপেনার।
দেখেশুনে খেলতে থাকা দুই ওপেনার প্রথম পাওয়ার প্লের শেষের দিকে খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপরই ভারতের বোলারদের ওপর চড়াও হন এই দুই ওপেনার।
এই জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে ৯ ওভার ২ বলে। আর প্রথম পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে তুলে নেয় ৬৩ রান। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে আজ ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন কুমরা দাস। বিশ্বকাপ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারতের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১১ সালে মিরপুরে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ৫৬ রান। তবে বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রান ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ৬৯ রান। এবার সেটি ছাড়িয়ে গেলেন তারা।
ভারতের বিপক্ষে আজ নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। ৪১ বলে ৫০ করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৫টি চারের মার ও ৩টি ছয়ের মার। অর্ধশতকের পর নিজের ইনিংসকে আর বেশিদূর নিয়ে যেতে পারলেন না তানজিদ তামিম। দলীয় ৯৩ রানে কুলদ্বীপ যাদবের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি।
৪৩ বলে ৫১ রান করা তামিম কুলদ্বীপ যাদবের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফেরেন সাজঘরে। তার বিদায়ে ৯৩ রানে ভাঙে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি।
তানজিদ তামিম ফিরে গেলেও শান্তকে নিয়ে লড়তে থাকেন লিটন। কিন্তু দলীয় ১১০ রানে রবীন্দ্র জাদেজার বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে শান্ত ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। ১৭ বলে ৮ রান করে ফেরেন তিনি। এর পরেই নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন লিটন দাস। ৬২ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৫টি চারের মার।
৮২ বলে ৬৬ রান করেন লিটন কুমার দাস
৮২ বলে ৬৬ রান করেন লিটন কুমার দাস
তামিম, শান্তর পর দলীয় ১২৯ রানে ফিরে যান মেহেদেী হাসান মিরাজও। মোহাম্মদ সিরাজের বলে ১৩ বরে ৩ রান করে ফিরে যান তিনি। মিরাজের পর সাজঘরে ফিরে যান অর্ধশতক তুলে নেওয়া লিটন দাস। রবীন্দ্র জাদেজাকে তুলে মারতে গিয়ে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। আউট হওয়ার আগে করেন ৮২ বলে ৬৬ রান। লিটনের বিদায়ের পর তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি গড়নে মুশফিকুর রহীম। তাওহীদকে নিয়ে তিনি দলের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাওহীদের ব্যাট হাসছিলো না। রান পাচ্ছিলেন না তিনি। রানের জন্য তাওহীদ হৃদয় দলীয় ১৭৯ রানে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। রান না পাওয়া হৃদয় শার্দূল ঠাকুরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। আউট হওয়ার আগে করেন ৩৫ বলে ১৬ রান।
১৭৯ রান উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাত মুশফিক জুটি বাঁধেন মাহামুদউল্লাহর সঙ্গে। কিন্তু এই জুটিও বেশি সময় টিকতে পারেনি। দলীয় ২০১ রানে জাসপ্রিত বুমরার বলে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে করেন ৪৬ বলে ৩৮ রান।
এরআগে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপের হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। তার আগে এই মাইলফলক পেরিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আজকের আগে মেগা আসরটিতে এক হাজার রান পূর্ণ করতে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল ৪ রান।
তবে এমন আনন্দের দিনেও নিজেরে ইনিংসটাকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি। ৩৮ রানেই ফিরে যান আজ। মুশফিকের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন ‘সাইলেন্ট কিলার’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নাসুমকে নিয়ে একাই লড়তে থাকেন। কিন্তু দলীয় ২৩৩ রানে নাসুমের বিদায়ে এই জুটিওে ভেঙে যায়। ১৮ বলে ১৪ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি।
শেষ পর্যন্ত নাসুমের শেষ বলের ছক্কায় ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ৪৬ রানে ফিরে যান সাজঘরে। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজা ২টি, জাসপ্রিত বুমরাহ, শার্দূল ঠাকুর, কুলদ্বীপ যাদব একটি করে উইকেট নেন।
Leave a Reply