জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এশীয় অঞ্চলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
রবিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৯-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদন করে আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি করছে। ওষুধ ছাড়াও আরও অনেক পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ নিজস্ব ব্রান্ড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ এই অঞ্চলে বাণিজ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য এগিয়ে যাবে নতুন দিগন্তে। নতুন নতুন পণ্য ও সেবার উদ্ভাবন আমাদের রপ্তানির ঝুড়িকে আরও সমৃদ্ধ করবে। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আহরিত হবে এবং সর্বোপরী বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হবে।
মন্ত্রী জানান, ২০২৬ সালে দেশ স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এর ফলে প্রাথমিকভাবে আমাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। এসময় তিনি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
টিপু মুনশী আরও বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিগত পাঁচ দশক দেশের রপ্তানি সম্প্রসারণে যেভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের এ প্রচেষ্টা আরও বেগবান হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উত্তরোত্তর প্রসার ঘটাতে ভূমিকা রাখবেন। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন এবং রেখে চলেছেন। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে সরকার ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করছে।
দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, এতে করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হয় অন্যদিকে বেকারত্ব হ্রাস পায়। এ দেশটা আমাদের সবার। উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা শুধু লাভের আশা না করে দেশের নানা খাতে অবদান রাখেন বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের ফলে যে সব মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অবকাঠামগত এবং সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন বাস্তবায়নের পথে।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিজয়ী সব রপ্তানিকারককে অভিনন্দন জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় রপ্তানিতে রপ্তানিকারকদের স্বীকৃতির পাশাপাশি এই ট্রফি রপ্তানি খাতে একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান এ.এইচ.এম. আহসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিঞ্জ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
অনুষ্ঠানে ২৮টি পণ্য খাতে ৭১টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২৮টি স্বর্ণ ট্রফি, ২৫টি রৌপ্প ট্রফি এবং ১৭টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করা হয়।
এছাড়াও সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ট্রফি প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী ট্রফি নির্বাচনের জন্য মোট ৩২টি খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্য হতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অর্জিত রপ্তানি আয়ের ভিত্তিতে প্রাপ্ত ২৪৪টি আবেদন বাছাইয়ের পর যোগ্য খাতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮টি। উক্ত অর্থবছরে জাহাজ ও মেলামাইন খাতে কোনো আবেদন পাওয়া যায়নি। চূড়ান্ত যাচাইয়ান্তে কয়েকটি খাত হতে কিছু আবেদন বাদ পড়ে। ২৮টি খাত হতে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে মনোনীত ৭১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮টি স্বর্ণ, ২৫টি রৌপ্য এবং ১৭টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করা হয়। এছাড়াও সব খাতের মধ্য হতে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি শিরোনামে ১টি বিশেষ ট্রফি(স্বর্ণ) প্রদান করা হয়।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রাপক নির্ধারণে নীতিমালা অনুসারে রপ্তানি আয়, আয়গত প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্যের সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ, কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন অবস্থা ইত্যাদি মূল্যায়নপূর্বক আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান নিরূপণ করা হয়। এসব কার্যাদি সম্পাদিত হয়ে থাকে দুটি কমিটির মাধ্যমে (প্রাথমিক বাছাই ও চূড়ান্ত বাছাই)।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৯৫.২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি এবং অন্যান্য সূচকে সক্ষমতা অর্জিত হওয়ায় পণ্য খাত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল জিন্স লিমিটেড “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি (স্বর্ণ)” লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফিতে ব্যবহৃত স্বর্ণের পরিমাণ ২ ভরি (২২ ক্যারেট)। অন্যান্য ট্রফির প্রতিটিতে ১ ভরি করে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ ধাতু ব্যবহৃত হয়। ট্রফিসমূহের মধ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফিতে ব্যবহৃত ধাতুর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হয় পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা এর মাধ্যমে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে করোনা মহামারি বাংলাদেশের রপ্তানিকে ততটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি যতটা অনুমান করা হয়েছিল। সরকারের নানামুখি উদ্যোগে করোনার পরপরই দেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম সক্ষম হয়েছে।
Leave a Reply