জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের প্রাক্কালে দেশকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। ওই সময় বাংলাদেশে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা আজও পূরণ হয়নি। তাদের শূন্যতা আজও অনুভব করে দেশ, দেশের মানুষ।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, বিজয়ের প্রাক্কালে ওইদিনটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বেছে নিয়েছিল দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য। এতে নিশ্চয়ই আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। আমরা আমাদের অভিভাবকদের হারিয়েছি। কিন্তু আমরা তো তাদের উত্তরাধিকার, আমরা বুদ্ধিজীবীদের ভাবাদর্শকে ধারণ করি। সেটিই আমাদের শক্তি। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার যত বিলম্বই হোক না কেন, দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা উচিত। কারণ এসব বিষয় কোনো আপস চলে না।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আমরা এখনো অনুভব করি বলেই আজ এই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে তাদের স্মরণে এসেছি। যতদিন এই বাংলার মাটি থাকবে ততদিন তাদের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাদের চেতনাকে ধারণ করে ভবিষ্যতে দেশে এমন বুদ্ধিজীবী তৈরি হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের চেতনা আমাদের মধ্যে আছে। এটাকে ধারণে করেই দেশ এগিয়ে যাবে।
শিক্ষক শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে আমাদের যে ক্ষতি করেছে, তা পুরোপুরি পূরণ হবার নয়। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে বিকল্প মানুষ চলে আসে, না হলে তো একটা দেশ চলতে পারে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ বেঁচে থাকলে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেত। বুদ্ধিজীবীদের আকাঙ্খা ধারণ করা আমাদের প্রয়োজন। তাদের আকাঙ্খা বহন করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলেই দেশটা সুন্দর হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু তো আরেকজন হবে না। যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, তাদেরকে আমরা ফিরে পাব না। কিন্তু তাদের উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে উন্নততর পর্যায় এগিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছি। বুদ্ধিজীবীরা আমাদের শিখিয়ে গেছেন কিভাবে সংগ্রাম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তাদের শিক্ষা নিয়ে আগামী প্রজন্ম দেশকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যাবে।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশের যে ক্ষতি করেছে তা কোনোদিন পূরণ হবার নয় মন্তব্য করে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে বিজয়ের আগ মুহূর্তে বেছে বেছে দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। এই ক্ষতি পূরণ হতে আরও ৭০ থেকে ৮০ বছর লাগবে। কারণ মেধা তো দিনে দিনে তৈরি হয় না। মেধা তৈরি হতে সময় লাগে, সে হিসেবে ওই সময়ের মতো বুদ্ধিজীবী পেতে আরও সময় লাগবে দেশের।
এস তাসাদ্দেক আহমেদ বলেন, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিরোধীতা করেছে, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গেও যারা জড়িত ছিল তাদের সকলের বিচার হওয়া দরকার। বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে দেশ আজ আরও উন্নত হতো।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। যা বিশ্বের ইতিহাসের জঘন্যতম এক বর্বর ঘটনা।
Leave a Reply