অনলাইন ডেস্ক : জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন ও চাপে রাখতে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত ছাড়াই নিজেদের দায় দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এসব বলেন। তিনি বলেন, দেশে আজ জঙ্গীর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগ। তাদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যে, হত্যাযজ্ঞে গোটা দেশ আজ অগ্নিগর্ভ, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, দেশ আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রে, জংলী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের সংবিধানে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন করার অধিকার রয়েছে। এই সাংবিধানিক অধিকারবলে তারা যেকোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন করতেই পারেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ফ্যসিস্ট আওয়ামী সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে যেয়ে যে হত্যাযজ্ঞ করেছে, তা শুধু দেশের ইতিহাসে নয়, উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল।’
‘এই হত্যাযজ্ঞ তথা গণহত্যার দায় থেকে নিজেদেরকে আড়াল করতে গণবিরোধী সরকার তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কতকগুলো প্রতিষ্ঠানে ন্যাক্কারজনক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে উল্টো এসবের দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। অথচ বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত সত্য যে, এই গণহত্যা, ধ্বংস, নৈরাজ্যের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারই দায়ী। জনসাধারণ নিজের চোখে দেখেছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্র লীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা অস্ত্র হাতে নির্মম, নির্দয়ভাবে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণকে হত্যা করেছে। এমনকি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আকাশ পথেও।’ বলেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থী, জনতা, বাসা বাড়িতে থাকা নিষ্পাপ ছোট্ট শিশু, গৃহিনী নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী-নেতারা তাদের অপরাধ আড়াল করতে এসব ঘটনার জন্য তথাকথিত তৃতীয় শক্তি আবিস্কার করার অপচেষ্টা করছে এবং ‘তৃতীয় শক্তি হিসেবে বিএনপিসহ অপরাপর বিরোধী দলকে চিহ্নিত করতে বিরামবিহীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব করে তারা আরও ভুল করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। তাদের নির্দেশে, পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে। সরকার এর দায় বিএনসিহ অন্যান্য বিরোধী ওপর চাপানোর অপউদ্দেশ্যে দলের সিনিয়র নেতা এবং কর্মীসহ ১১ হাজার নিরপরাধ ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে, অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, রিমান্ডের নামে ও কারাগারেও তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গণহত্যা, নৃশংসতা, ফাসিবাদী কায়দায় নির্মম-নির্দয় দমন নিপীড়ণের জন্য সরকার দেশ-বিদেশে যখন তীব্র ক্ষোভ, ঘৃণা, চাপের মুখোমুখি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম যখন সরকারকে জবাবদিহি করতে বলছে, দেশে দল মত নির্বিশেষে ছাত্র, অভিভাবক, শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, আইনজীবী, যুবক, নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিবাদ, ধিক্কার জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে, তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন ও চাপে রাখতে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তদন্ত ছাড়াই নিজেদের দায় দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপর চাপানোর অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়, অগণতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিক। ছাত্র আন্দোলনে বর্বরোচিত গণহত্যার দায়ে আওয়ামী সরকারের পদত্যাগের চলমান ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে নতুন বিতর্ক, নতুন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, যা বুমেরাং হতে বাধ্য। পরিকল্পিতভাবে নন ইস্যুকে ইস্যু বানানোর পুরাতন কার্ড নতুন করে খেলে দেওয়া হবে না।’
আওয়ামী লীগ জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারবে না। শত শত ছাত্র, কিশোর, যুবক, শিশুসহ জনতার রক্ত বৃথা যেতে পারে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এসব হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেরা পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি আরো জটিল ও সংঘাতময় করে তার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর আশঙ্কা করছে দেশবাসী। অতীতেও তারা নিজেরা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছে। চলমান আন্দোলনেও করছে। বিরোধী দল, মতকে নির্মূল করে বিরোধী দল শূন্য করার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্রঘাতি আওয়ামী লীগ তা ভবিষ্যতেও করতে পারে। এজন্য দেশবাসী ও রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বহুদলীয় ব্যবস্থায় একেকটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন নীতি, আদর্শ, কর্মসূচি থাকাটাই স্বাভাবিক। বল বা শক্তি প্রয়োগ না করে উন্মুক্ত রাজনীতির ময়দানে জনগণের সমর্থনে রাজনৈতিকভাবে তা শান্তিপূর্ণ মোকাবেলা করাই রাজনৈতিক দলের কাজ। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে বা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে নির্মূল বা ধ্বংস কিংবা নিষিদ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত। তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে তার প্রমাণ মেলে।
Leave a Reply