জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: মেজর (অব.) হাফিজের নেতৃত্বে আরও একটি নতুন দল গঠনের যে আলোচনা তৈরি হয়েছে তা উড়িয়েই দিলেন বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, তার নেতৃত্বে দল গঠনের তথ্য ভুল। তিনি এখনো বিএনপিতেই আছেন। বিএনপি থেকেই রাজনীতিতে অবসর নিতে চান।
রাজনীতিতে প্রায় ‘নিষ্ক্রিয়’ হাফিজ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন বিএনপি সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী।
রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে বুধবার বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলন এসে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন দলটির এ ভাইস চেয়ারম্যান।
গত সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক শান্তি সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ মেজর (অব.) হাফিজের নেতৃত্বে আরেকটি দল হতে যাচ্ছে বলে বক্তব্য দেন। এরপরই হাফিজকে নিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নতুন দল গঠনের তথ্য সঠিক নয়। শারীরিক অবস্থার কারণে রাজনীতির ওপর আগ্রহ হারিয়েছি।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে আসায় বিএনপি এতবছর ক্ষমতার বাইরে বলেও মন্তব্য করেন দলটির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ। এও বলেন, ‘বিএনপিতে সব ইয়েস স্যার; চেয়ারপারসনের কাছে বর্তমান নেতৃত্বের সত্য বলার সাহস নেই।’
‘সাইফুর রহমান ছাড়া সত্য বলার লোক পাইনি’
হাফিজ বলেন, ‘আট বছর দলের কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না। জাতির স্বার্থে কিছু কথা বলতে হয়। দলের সব নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি। বিএনপিতে একটি সত্যি কথা বলা লোক চোখে পড়েনি সাইফুর রহমান ছাড়া। সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার বলা লোক।’
আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। গত কয়েক মাস সিএমএইচ ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছি। আবারও সিঙ্গাপুর যাবো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। বিএনপির রাজনীতি থেকেও অনেকটা দূরে। আমি অন্য দল গঠন করতে যাচ্ছি তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সঠিক নয়। আমি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বর্তমানে জড়িত নই।’
‘খালেদা জিয়া আমার নেত্রী’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার নেত্রী মন্তব্য করে হাফিজ বলেন, ‘৩১ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছি। অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ সালে দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেসময় শওকত মাহমুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না, এখনও নেই। অথচ আমাকে এসব অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আমি সেসময় আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরি।’
‘এটি আমি ডিজার্ভ করিনা। ৩১ বছর রাজনীতি করার পর আমাকে নিয়ে এমন অভিযোগ মেনে নিতে পারি না। ২৩ বছর ধরে আমি ভাইস চেয়ারম্যান। এখন স্থায়ী কমিটির দুজন ছাড়া সবাই আমার নিচে ছিল, সবাই ওপরে উঠেছে। পদ পদবির জন্য রাজনীতি করিনি।’
‘জিয়ার আদর্শে না থাকায় এতবছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি’
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানান বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান। বলেন, ‘আমার কারণ দর্শানোর নোটিশে জবাব দেয়া হয়েছে। তিন বছর আগে চিঠির জবাব দিয়েছি। এখন অগ্রাধিকার আমার শারীরিক পরিস্থিতির উত্তরণ।’
হাফিজ বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শের বাইরে যাওয়ার কারণে বিএনপি এতবছর ক্ষমতার বাইরে। বিএনপিতে সত্যি কথা বলার মতো লোক নেই, এটাই বাস্তবতা। ২০১৪ সালে নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া উচিত ছিল। সেটা গ্রহন না করে ফায়দা হয়নি।’
শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নাও নিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন সাবেক এই মন্ত্রী। বলেন, ‘আমি আমার এলাকার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানাবো।’
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না
সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজপথে শুধু স্লোগান দিলেই সরকারের কাছে দাবি আদায় সম্ভব হবে না। বিএনপির উচিত কিভাবে আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করা।’
‘আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে টহল দেবে, সক্রিয় থাকবে। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি সংঘাতের রাজনীতির অবসান হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপিনেতা হাফিজ বলেন, ‘আপনার কাছে আহ্বান, আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা… দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন।’
বিএনপিতে ত্যাগী নেতারা কেন বঞ্চিত?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ বলেন, ‘দলের সংস্কার করুন। এভাবে চলতে পারে না। সাংগঠনিকভাবে যোগ্য নেতা নির্বাচন করুন। শৃঙ্খলা আনুন। ত্যাগী নেতারা কেন বঞ্চিত? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল পরিচালনা করুন।’
‘আমি শারীরিক কারণে শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেবো। বিএনপির সঙ্গে থাকতে চাই সদস্য হয়ে। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাই। আমি মুক্তিযোদ্ধা, দেশের শান্তি চাই। যদি দেশের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে খারাপ হয় তাহলে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই দায়ী থাকবে।
Leave a Reply