জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে এখন ‘উত্তর কোরিয়ার মতোই একদলীয় শাসন’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশ এখন আর কোনো প্রার্থক্য নেই। একাকার হয়ে গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন-গ্রেপ্তারে চিত্র তুলে ধরে একথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘এটা একটি এক দলীয় দেশ শুধু নয়, নিষ্ঠুর এক দলীয় দেশ, এখানে সেই রকম একদলীয় শাসন চলছে।
তিনি বলেন, কথা বলা মানে হচ্ছে সে অদৃশ্য হয়ে যাবে, লাশ হয়ে পড়বে। কয়েকদিন আগে যুব দলের এক ছেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুই-তিন পর তার লাশ পাওয়া গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র।
রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনের মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দিয়ে এরপর থেকে সারাদেশে ১৩ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। এ সময়ে ১২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৭ জনের অধিক নেতাকর্মী।
সরকার নানাভাবে বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সম্পর্কে বিভ্রান্ত তৈরি করবার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা অনর্গল মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এক সন্ত্রাসী উপরিকাঠামো, সন্ত্রাসের শৃঙ্খলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সারাদেশের মানুষ সমস্ত কিছু দেখছে।
‘দেখতে দেখতে তাদের ভেতরে যে দ্রোহ, তাদের ভেতরে ভেতরে যে তাদের ক্রোধ, ভেতরে ভেতরে তাদের যে ক্ষোভ তা পূঞ্জিভূত হচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব টের পাচ্ছেন না।’—যোগ করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘তাণ্ডব’ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, গ্রেপ্তারের নানা ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
রিজভী বলেন, চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন ওরা বিভোর। ভেবেছে এভাবে নির্মমতা করে তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে। তারা যেভাবে সাজিয়ে নিয়েছে এই সাজানো বাগান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে অন্য সকলকে নিয়ে ভেবেছে ক্ষমতা থেকে তাদেরকে কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না। ক্ষমতার মসনদ এতোই শক্ত ওরা মনে করছে। এই মসনদ শক্ত করার জন্য পৃথিবী অনেক স্বৈরশাসকরা ভেবেছিলো… কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে যে, অত্যাচারীরা যে অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে স্বাধীনতাকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষ সেই অস্ত্র তাদের দিকেই তাক করে।
‘যে দুর্বিনীত অত্যাচারের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা(সরকার) আবার একটা একতরফা নির্বাচন করবেন, নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন দেবেন, ভাগাভাগির নামে তাদের তথাকথিত যে মহাজোট সেই মহাজোটের কোন দলকে কয়টা সিট পাবে সেটা তারা ভাগাভাগি নির্বাচন করবেন এবং সেটা সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে… এটা ছাড়া অন্য কোনো পন্থা তাদের নেই। না হলে একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ওপর নির্ভরশীল দল হলে তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পাবে কেনো?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের এমন ‘আশা’ জনগণ পূরণ হতে দেবে না।
আগামী রবিবার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচির প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আগামী পরশু থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, যারা প্রকৃত গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে প্রত্যেকে এই অবরোধ কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করবে। সারা বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাট, মহাসড়কসহ প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত হবে এবং সরকারের যত জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন-অত্যাচার প্রতিহত করেই তারা রাজপথে থাকবেন….বিএনপির পক্ষ থেকে সারাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে সেই আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।
Leave a Reply