অনলাইন ডেস্ক : ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার সন্দেহে দুই সহোদর ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ওই ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
এ সময় ওই ঘটনায় জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান ও মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ আসাদুজ্জামান এবং ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার বিশ্বাসসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে সহায়তা করলে পুরস্কারের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার বিশ্বাস জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার শপথ করে নির্মাণশ্রমিকদের হত্যার কাজে অংশ নিয়েছেন। শ্রমিকদের মারপিটের শুরুটা তিনিই (চেয়ারম্যান) করেন। পরে আবার ওসি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), ইউএনওকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সঙ্গে নিয়ে তিনিই উদ্ধার অভিযানে যান।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ–সংক্রান্ত দুটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশের আগে আমরা বিষয়টি জানতে পারিনি। ওই ভিডিও প্রকাশের পর তিনি (চেয়ারম্যান) ও ইউপি সদস্য পালিয়ে গেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান মুঠোফোন সঙ্গে নেননি। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করতে বেগ পেতে হচ্ছে। পুলিশ একবার মাগুরা ও আরেকবার যশোরের খুব কাছাকাছি গিয়েও তাকে ধরতে পারেনি।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যকে বরখাস্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হবে। এই চেয়ারম্যান অভ্যাসগতভাবে অপরাধী। এর আগে মধুখালীর ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার জন্য একবার ও টিসিবির কার্ড চুরি করায় আরেকবার তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে দুবারই তিনি হাইকোর্টের মাধ্যমে পদ ফিরে পান। তাদের ধরতে সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে সাহায্যকারীকে পুরস্কৃত করা হবে এবং সাহায্যকারীর নাম প্রকাশ করা হবে না।’
আসামিদের আত্মসমর্পণ করে আইনগত সুবিধা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আসামি হিসেবে যাদের নাম আমরা পেয়েছি, তাদের সবার জাতীয় পরিচয়পত্র শনাক্তের মাধ্যমে পরিচয় উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তারা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য সব বিমানবন্দর ও নৌবন্দরকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের অনেকের পাসপোর্ট নেই। তারা যাতে অবৈধপথে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারেন, সে জন্য বিজিবিকে নজরদারির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফায়দা লুটতে নানা মহল চেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিদেশে বসে নানা আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। এখন ফেসবুকে তা ভাসছে। ফেসবুকে আপত্তিকর কিছু দেখলেই জেলা প্রশাসনকে জানালে সাইবার আইনে মামলা করা হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
১৮ এপ্রিল রাত আটটার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে থাকা মন্দিরে প্রতিমার গায়ে আগুন লাগানোর অভিযোগে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রটানো হয় যে মন্দিরে আগুন দেওয়ায় গণপিটুনিতে দুই সহোদর নিহত।
কিন্তু ২১ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ে। ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও চিত্রে মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান এবং ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার বিশ্বাসের উপস্থিতিতে নিহতদের পেটাতে দেখা গেছে।
Leave a Reply