জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। দীর্ঘ ৫০ বছর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে বদলে গেছে এই দ্বীপের দুই লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান। এক সময় সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া দ্বীপটির মানুষের বাড়িঘরেও লেগেছে বিদ্যুতের আলোকচ্ছটা। বিদ্যুতের কারণে উপজেলার প্রায় সবখানেই আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
কুতুবদিয়ার বাসিন্দারা জানান, একটা সময় দেশের আর্থ সামাজিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। আধুনিক কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এখন এই দ্বীপে সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।
একসময় সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ঝুঁকি নিয়ে প্রসূতি মায়েদের নিয়ে যাওয়া হতো অপর প্রান্তে চকরিয়া বা কক্সবাজারে। এখন আর সমুদ্র পাড়ি দিতে হয় না। বিদুৎ আসায় উপজেলা হাসপাতালেই হচ্ছে অস্ত্রোপচার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক মাস আগে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর পর এই দ্বীপের মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করে উঠাছে কুতুবদিয়ার রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়িসহ উপজেলা সদরের বড়ঘোপ বাজার।
বিদ্যুৎ বরাবরই কুতুবদিয়ার মানুষের কাছে স্বপ্ন ছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষের কথা শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া কেউ ভাবেনি।
শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ২০২০ সালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্প হাতে সরকার। গত জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে পেকুয়ার মগনামা ঘাট পর্যন্ত ৩৩ কেভি রিভার ক্রসিংসহ লাইন নির্মাণ করা হয়। সেখান থেকে সাগরের তলদেশে ফাইবার অপটিকসহ ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সাবমেরিন লাইন নির্মাণের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ দিতে কুতুবদিয়ায় নির্মিত হয়েছে দুই কিলোমিটার বিতরণ লাইন। এই দ্বীপে প্রায় একশ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে প্রায় দুই লাখ মানুষ বসবাস করেন। ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৬শ গ্রাহকদের সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। পরে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা বন্ধ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় স্বল্প আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি।
চকরিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বৌর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কুতুবদিয়ার আবাসিক প্রকল্প দপ্তরের প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘এই এলাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে দিনে চার পাঁচ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারোটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এখন ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এখানে বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ আসার পর এখানকার মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। ক্ষুদ্র শিল্প করার দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মৎস ও বরফ শিল্পের অনুমোদনেরর জন্য যোগাযোগ করছে স্থানীয় উদোক্তারা।
কুতুবদিয়া উপজেলা সদরের বড়ঘোপ বাজারে ব্যবসায়ী করিম উদ্দিন বলেন, ‘কুতুবদিয়ার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ আসবে কখনো ভাবিনি। ১২ এপ্রিল রাত থেকে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের ধন্যবাদ।’
বড়ঘোপ বাজার কলেজের মুদি দোকানের ব্যবসা করেন মো. আজিজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগে চাল-ডাল, আটা-ময়দারসহ নান নিত্যপন্য বিক্রি করতে পারতাম। আগে আইসক্রিম বিক্রি করতে পারতাম না, বিদুৎ আসায় তিন মাস ধরে আইসক্রিম বিক্রি করছি।’
Leave a Reply