জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: পশ্চিম আফগানিস্তানে হেরাত প্রদেশে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৪ জন নিহত এবং ৭৮ জন আহত হয়েছে। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ভূমিকম্প এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। ভূমিধস এবং ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে পড়া লোকের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ওই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বড় ধরনের আফটারশক হয়েছে। যার কেন্দ্রস্থল ছিল ওই অঞ্চলের বৃহত্তম শহরের কাছে।
ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে যে ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল এই অঞ্চলের বৃহত্তম শহর হেরাত থেকে ৪০ কিলোমিটার ২৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে এবং এর পরে ৪.৬ এবং ৬.৩ মাত্রার মধ্যে সাতটি আফটারশক হয়েছিল।
হেরাতের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী বশির আহমেদ এএফপিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের অফিসে ছিলাম এবং হঠাৎ ভবনটি কাঁপতে শুরু করে। ‘দেয়ালের প্লাস্টার নিচে পড়তে শুরু করেছে এবং দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, কিছু দেয়াল ও ভবনের কিছু অংশ ধসে গেছে।
বশির আহমেদ বলেন, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না, নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন। আমি খুব চিন্তিত এবং ভীত, এটি ভয়ঙ্কর ছিল।
দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম প্রদেশ হেরাতের জনস্বাস্থ্য পরিচালক মোহাম্মদ তালেব শহিদ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মরদেহ আনা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত সংখ্যা নয়। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
তালেবান সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেরাতের বাসিন্দা ও দোকানদাররা ভবন থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোল্লাহ জান সায়েক এএফপিকে বলেছেন, হতাহতের ওই সংখ্যা ‘প্রাথমিক’। গ্রামীণ ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তালেবানের এই কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিস্তারিত তথ্য পাইনি।
ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা
প্রায় এক ঘণ্টার প্রথম ভূমিকম্প এবং অনেকগুলো আফটারশকের পর হেরাতের রাস্তায় রাস্তায় অনেক নারী, শিশু ও পুরুষের ভিড় দেখা গেছে। ইউএসজিএসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, আফগানিস্তানে এই ভূমিকম্পে শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হতাহত ও ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক বা জাতীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
পাপুয়া নিউ গিনিতে ৬.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
এর আগে, ইউএসজিএস জানায়, আফগানিস্তানে আঘাত হানা প্রথম ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে হেরাত শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার গভীরে।
হেরাতের পূর্বাঞ্চলে ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের সঙ্গে। এই শহরটিকে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, হেরাত প্রদেশের রাজধানী হেরাত শহরে ১৯ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে।
গত বছরের জুনে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার এক ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে সেটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল বলে সেই সময় জানায় দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের মার্চে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে দুই দেশে অন্তত ১৩ জন নিহত হন। হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ইউরেশীয়-ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থান হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান।
Leave a Reply