অনলাইন ডেস্ক : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার তাগিদের পাশাপাশি নির্বাচনি মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি জোটগঠন না হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে বিএনপির সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা রাখা দলগুলোকে আসন ছাড় দেবে দলটি।
বলা হচ্ছে, বিএনপি বিজয়ী হলে ‘সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন’ এবং ‘দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট’ গঠন করা হবে। নির্বাচনের অংশ হিসেবে সারা দেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আরও সক্রিয় করতে নভেম্বর মাসে মহানগরসহ সব সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সব দলকে নিয়ে আমরা এগোতে চাই। তিনি বলেন, বিএনপি বিজয়ী হলে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে চান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বার্তা যুগপৎ জোট ও বাকি দলগুলোকে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
জোট নেতাদের আসন ছাড় ও জাতীয় সরকার : জানা যায়, নির্বাচনি আসনভিত্তিক যুগপৎ আন্দোলনের জোট নেতাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুলিপি জোট নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে জোটভুক্ত নেতাদের জনসংযোগ ও তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি আসনের থানা, উপজেলা, পৌরসভা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের ছয় নেতাকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে ঢাকা-১২, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে পটুয়াখালী-৩, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে ঝিনাইদহ-২ এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব চিঠির বাইরে ১২-দলীয় জোট নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মৌখিকভাবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে কাজ করতে বলা হয়েছে। চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন। তবে এ নিয়ে কেউই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চাননি। তারা বলেন, বিষয়টি এত বেশি ‘সেনসেটিভ’ যার কারণে প্রকাশ্যে কিছু বলা এই মুহূর্তে ঝুঁকি হয়ে যায়।
জেলা-মহানগরে সমাবেশ : আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বরে মহানগরসহ সব সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশের কথা ভাবছে বিএনপি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতিতে দলটির অবস্থানও জনগণকে জানাতে চান দলীয় নীতিনির্ধারকেরা। এ কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হয়েছে। সমাবেশে বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা তুলে ধরার পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবি তোলা হতে পারে। এসব সমাবেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে আওয়ামী লীগের দোসরদের সরানো, হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যাসহ ১৫ বছরে গুম-খুনে জড়িতদের বিচারের দাবিও থাকবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এর আগে ২০১৮ সালে দলটি অংশ নিয়েছিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হয়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল দলটি।
Leave a Reply