জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: দেশে আরও বেশ কিছু সময় লোডশেডিং থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, কোথাও কোথাও ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। এই পরিস্থিতি সহসাই কাটছে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রস্তাবিত পদক্ষেপ’ শীর্ষক সিপিডির আলোচনায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়। আলোচনায় অংশ নেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক খসরু মো. সেলিম ও ব্যবসায়ী নেতা মোস্তফা আজিজ চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, গত এক বছরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ও সম্প্রতি প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আপনারা হয়তো আজকে, কালকে দেখবেন না। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেখবেন না। কিন্তু আমাদের অনুমান হচ্ছে‒ এই লোডশেডিং সহজে যাবে না। বাংলাদেশে আরও বেশ কিছু সময় লোডশেডিং থাকবে বলে আমাদের আশঙ্কা।‘
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর (আইপিপি) কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো পাওনা রয়ে গেছে। জ্বালানি আমদানি করার জন্য যে এলসি খোলার দরকার বিপিসির, সেটি খোলা যাচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ ঋণ করা হচ্ছে কেবলমাত্র জ্বালানি ব্যয় মেটানোর জন্য। এলএনজি আমদানি, বিদ্যুতে কৃচ্ছ্রতানীতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিসহ সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বিভিন্ন উদ্যোগগুলো যে নেওয়া হচ্ছে সেগুলো প্রকারান্তরে খাত সংশ্লিষ্ট সমস্যা থেকে উত্তরণে খুব বড় ভূমিকা রাখছে না।’
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে অনগ্রিডে ২৪ হাজার, আর অফগ্রিডে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট রয়েছে। এই বড় ক্যাপাসিটিটাই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার পুরোটাই প্রায় আমদানি জ্বালানি নির্ভর।’
আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘আইন পরিবর্তন করে গণশুনানি তুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে আমরা বলতে না পারি কত হাজার কোটি টাকা কোথায় চুরি হয়েছে। কোথায় লুটপাট হয়েছে, কীভাবে হয়েছে তা যেন জানতে না পারি সে কারণে।’
শামসুল আলম বলেন, ‘২০২২ সালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় দেখা গেল জ্বালানি উন্নয়ন ফান্ডের ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয়নি। আর ৩৫ শতাংশ কোথায় কীভাবে ব্যয় করেছে সেটা কেউ বলতে পারছে না। জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলে টাকা দিয়ে যাচ্ছি। এগুলো না দিলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমতো। আমাদের টাকার ওপরে সুদ নেওয়া হচ্ছে। এইভাবে আমরা ঠকছি।‘
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ট্রান্সমিশন-ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে ১৪ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। তার আগে আইন করে বিদ্যুৎ খাত, জ্বালানি খাত হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এখন আট ঘণ্টা, ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।’
জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি খাত আরও চাপে পড়বে৷’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকার পরও অনুসন্ধানে জোর নেই৷ বারবার বলেও কাজ হয় না।
Leave a Reply