জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: তথাকথিত বাকশাল সঙ্গীদের নিয়ে ‘সুপার-ইমপোজড’ নির্বাচনের আজব তামাশা করছেন শেখ হাসিনা মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটা আসলে বাকশালের নতুন ভার্সন। আপডেটেড বাকশাল ২.০ ভার্সন।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবের প্রতিনিয়ত শব্দবাজি ফাটিয়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। তিনি এখন বলেন, ২৯টি নিবন্ধিত দল নিয়ে তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করছেন। কিন্তু তাদের এই ২৯ দলের মধ্যে তিন-চারটি বাদে অন্যগুলোর নামও শোনেনি কেউ। স্বগৃহে ইলেকশান থিয়েটারে রঙ্গনাটক মঞ্চস্থ করতে যাঁদের আনা হয়েছে তারা হলো আওয়ামী লীগের সঙ্গ-অনুসঙ্গ।
সোমবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের আশা দূরাশায় পরিণত হয়েছে এখন। মনোনয়ন নিয়ে তাদের সঙ্গে কামড়া-কামড়ি শুরু হয়েছে। যারা এইসব দোকান থেকে মনোনয়ন কিনেছিল তাদের অধিকাংশই জমা দেয়নি। আর যাঁদের এমপি বানানোর মুলো দেখানো হয়েছিল তাঁরাও ঘুরছে নিরাশায়। আসলেও তাদের আশায় গুড়েবালি। আওয়ামী লীগ যে প্রতারক তা বুঝতে পারছে হাড়ে হাড়ে।
‘৫২ বছর আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চেয়েও এই আওয়ামী রক্ষী বাহিনী-হানাদার বাহিনী ভীষণরকম হিংসাশ্রয়ী, তাদেরকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর। তাদের কাছে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যরা মানুষ না। বিএনপি’র নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার এমনকি তাদের আত্মীয় স্বজনও হামলার লক্ষ্যবস্তু আর তাদের সম্পদ যেন গণিমতের মাল।’
তিনি বলেন, পুলিশ আতঙ্কে দেশের দুই কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকা নিমিষে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। এরা ফেরারি জীবন যাপন করছে। এলাকায়-এলাকায় অপ্রাশ্যে উদ্বাস্তু ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। গত দুই মাসে প্রায় ২০ হাজার মুক্তিকামী জনতাকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। বন্দি নির্যাতনের নেপথ্যে কাহিনী অবর্ণনীয়, এগুলো হচ্ছে চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা, অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পড়িয়ে কারা হাসপাতালের ফেলে রাখা, ছোট্ট সেলে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বন্দিকে গ্যাস চেম্বারের ন্যায় নিগৃহীত করা। অত্যাচারে কাশিমপুর কারাগারে ছয় দিনের ব্যবধানে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যু হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, রাতের গভীরে আওয়ামী দলদাস হানাদার বাহিনী হানা দিচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বাড়ি-বাড়ি। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের না পেলে তাঁদের ছেলেসন্তান, স্ত্রী, মা-বোন-ভাই-বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ভাঙচুর লুটপাট করছে। মুক্তিপন আদায় করছে। ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তিবাহিনীর লোকজন পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভৎস হত্যার মদদ দিত, ধরিয়ে দিত মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের লোকজনদেরকে। বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন নতুন করে রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তিবাহিনীর ভূমিকায় আর্বিভূত হয়েছে।
রিজভী বলেন, সংঘাতের বীজ বপন করে রক্তক্ষয়ী পরিণতির ফলশ্রুতিতে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে গুপ্ত হামলা চালানো হচ্ছে। গুপ্ত হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। একই কায়দা-কৌশলে গত এক মাস ধরে দেশে রক্ত ঝরাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসবাদী দল। মাথায় হেলমেট, মুখে মুখোশ পরে নম্বর প্লেটবিহীন মাইক্রোবাস অথবা মোটরসাইকেলে রাতের অন্ধকারে এসে গুপ্ত হামলা করছে আওয়ামী গুপ্ত ঘাতকরা। রাতের অন্ধকারে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও ককটেল বোমা মারা হচ্ছে। এইসব ঘটনায় সরাসরি পুলিশ প্রশাসন মদদ দিচ্ছে। তার প্রমাণ হলো কোনো ঘটনায়ই থানায় অভিযোগ ও মামলা নিচ্ছে না। দেশের আইন শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই। সব দুর্বৃত্তদের অধিকারে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ছেলেকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা আনোয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপির খুলনা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল আলম পিন্টুকে তার কপিলমুনির বাসায় রাত আড়াইটায় অভিযান চালিয়ে বাসায় না পেয়ে পুলিশের এসআই সাহাজুল পিন্টুর স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেছে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। বাসার আসবাব-টেলিভিশন যা পেয়েছে ভাঙচুর করেছে। খাবারে চাউলের ড্রাম রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এক উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসের দৃশ্যপট দেশজুড়েই। এক ভয়াবহ বিভিষিকাময় পরিস্থিতি। এতোকিছুর পরও প্রবল শক্তিতে হানাদারমুক্ত বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে আন্দোলনের মাঠে লড়ছে বিএনপিসহ সমস্ত গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো। বৈপ্লবিক স্তরে প্রবেশ করেছে তারা। শেখ হাসিনার একদলীয় তামাশার নির্বাচনের স্বপ্ন ধুলিষ্যাৎ করে জনগণের মুক্তি ঘটবে যে কোনো সময়ে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, একতরফা নির্বাচনকে লোক দেখানো বৈধতা দিতে সরকারের প্রস্তুতি ছিল প্রার্থী বেচাকেনার হাট জমিয়ে তোলার। কর্মীবিহীন নাম সর্বস্ব দলের নেতাদের পকেটে পুড়তে উদয়াস্ত খেটেও সুবিধা করতে পারেনি সরকারি দলের আজ্ঞাবহ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন এরপরেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে যাচ্ছেন। এই প্রহেলিকার উত্তর লুকিয়ে আছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায়। বাসে আগুন দেয়ার মামলায় অভিযুক্ত আসামি তেলেসমাতির জামিনে এক ঘণ্টায় কারামুক্ত হয়ে নৌকায় চড়ে স্বঘোষিত হ্যাডমওয়ালা ব্যক্তির মুখ থেকে শুনলাম দুই কোটি দিয়া প্রত্যেককে ইলেকশনে দাঁড় করানো হয়েছে! তিনিই বলেছেন, ‘এগুলো তো ফকিন্নি পার্টি। দু-তিন কোটি টাকা পাইছে, দাঁড় করাইছে।’ একদিকে যেমন চলেছে বেচাকেনা তেমনি কাজে লাগানো হয়েছে চাপ প্রয়োগের কৌশলও। মামলা, হামলা হুমকি কোনো কিছুই বাদ যায়নি এ থেকে। কিন্তু কথিত দু’তিনটি ‘রাজদল’ বা কুইন্স পার্টি নামকাওয়াস্তে গঠন করে বিএনপিসহ সকল জনপ্রিয় দলকে দূরে সরিয়ে তাদের নির্বাচনের পাতানো খেলার মাঠে নামানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের আশা দূরাশায় পরিণত হয়েছে এখন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনার বৃন্দদের ন্যায় আধা-রোবটদের দৌলতেই শেখ হাসিনা ভোটার নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে চাচ্ছে। কারণ এই রোবটদের সুইচ আছে শেখ হাসিনা হাতে।
Leave a Reply