জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন: বর্জন, অংশগ্রহণ ও ডামি ভোটাভুটি’ শীর্ষক নির্দেশনামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করে আমার বাংলাদেশ পার্টি ‘এবি পার্টি’। শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত সর্বদলীয় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আ.ক.ম. ওয়ারেসুল করিম।
আলোচনা সভায় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, গণফোরাম সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, খ্যাতিমান আলোকচিত্রি ও মানবাধিকার সংগঠক ড. শহীদুল আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার , অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও বিএম নাজমুল হক, নাগরিক ঐক্যের সেক্রেটারি শহীদুল্লাহ কায়সার, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভূঁইয়া, এনডিএম নেতা লায়ন নুরুজ্জামান হীরা, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিগত ১৪ সালে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে, ১৮ সালে হয়েছে রাতের ভোটের নির্বাচন। আগামীতেও একই কায়দায় আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করার উৎসব চলছে। বিগত নির্বাচন গুলোর ভোট ডাকাতির ইতিহাস নিয়ে অনেক আগেই তথ্য উপাত্ত নিয়ে মানুষের সামনে হাজির করা দরকার ছিলো। দেরিতে হলে এবি পার্টি আজ একজন প্রখ্যাত নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ওয়ারেসুল করিমের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমান করেছে, কেন আওয়ামীলীগের অধীনে কোন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়।
মূল প্রবন্ধে ড. ওয়ারেসুল করিম বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে পিলে চমকানো তথ্য আপনারা পাবেন। এই নির্বাচনে আওয়ামীজোট কোথাও কোথাও ৮২ শতাংশ ভোট পেয়েছে অপর পক্ষে বিরোধী বিএনপি জোট ১১৭৯ কেন্দ্রে কোন ভোটই পায়নি। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, ১৮৭টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৯%, ২০২৩টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ। এই কেন্দ্র গুলোতে আওয়ামীলীগ পেয়েছে ৮৯ শতাংশ ভোট আর বিএনপি জোট পেয়েছে ৯ শতাংশ ভোট। এতেই প্রতীয়মান হয় কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আওয়ামী নির্বাচন কমিশন করেছে।
বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান গবেষণা করে ভোট ডাকাতির এই সুন্দর তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার জন্য গবেষক ও এবি পার্টিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা আগে দেখেছি চুরি বা জালিয়াতি হয় গোপনে কিন্তু ১৮ সালে যা হয়েছে তা নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন আর আওয়ামীলীগ মিলে জনসমক্ষে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। যে প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন চলছে তা অত্যান্ত হাস্যকর। সিন্ডিকেট করে বাজার লুট, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুটের যে মহোৎসব আওয়ামীলীগ চালিয়েছে সেই লোভেই আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়তে চায়না। জনগণের উপর গত পনের বছর যে সীমাহীন নির্যাতন চালিয়েছে সরকার তাতে ক্ষমতায় না থাকলে কি পরিনতি হবে সেই ভয়ও তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ভয় আর লোভ থেকে যে নির্বাচনী প্রহসনের আয়োজন তাতে জনগণের কোন অংশগ্রহণ নাই । এই ভোটে জনগণ অংশ নিবেনা ইনশাআল্লাহ।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিরা যে হলফ নামা দিয়েছে তা আগে দেখলে মানুষ আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কোন পার্টি করতোনা। এইভাবে মানুষ টাকার মালিক হতে পারে তা কল্পনাও করা যায়না। গতকাল পত্রিকায় দেখলাম একজনেরই তিনশো ফ্ল্যাট, যার সবই নাকি ইউরোপ আমেরিকায়। এখন একটাই উপায়, সরকারকে সকল সহোযোগিতা বন্ধ করতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চালাতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামে জোরালো ভুমিকা রাখা ও এরকম সর্বদলীয় অনুষ্ঠানের জন্য তিনি এবি পার্টিকে ধন্যবাদ জানান।
গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকে সুব্রত চৌধুরী বলেন, আওয়ামীলীগের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারেনা। যেখানে বিরোধীদল কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনা, পোস্টার লাগাতে পারেনা সেখানে নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু হবে। এই দেশ স্বাধীন ভাবে আর চলছেনা, বিগত ২০১৪ সাল থেকে দেশের নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে ভারতের পরিকল্পনায়। আর কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবেনা। জনগণ এই সমস্ত সার্কাসে অংশ নিবেনা।
খ্যাতিমান মানবাধিকার সংগঠক ড. শহীদুল আলম বলেন, আর আমরা রাতের ভোট চাইনা। এই জালিম সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও বদলে ফেলেছে। আজ যারা আওয়ামীলীগের পদলেহন করছেনা তাদেরকেই এখন রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই অবস্থা আর চলতে পারেনা। এবি পার্টিকে ধন্যবাদ এই উদ্যোগের জন্য। এই উদ্যোগ আমাদের আরও আগে নেয়া দরকার ছিলো।
খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, সরকারের এই জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে। ডান, বাম দেখার আর সময় নাই। ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা দখলের এই প্রক্রিয়া বার বার চলতে দেয়া যায়না। আজ বিরোধীদল গুলোর কর্মসূচিতে হামলা করে, মামলা দিয়ে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে একতরফা নির্বাচন করে শুধু কমিশনকে দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করার অপেক্ষায় রয়েছে। সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনে বাধ্য করতে হবে।
কমরেড সাইফুল হক বলেন, ৭ই জানুয়ারী নির্বাচন নির্বাচন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে চায়, খেলা দেখতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবেনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। কারন তিনি বলেছেন বিএনপি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। এই ধরনের কথা আমরা আমরা বাকশাল কায়েমের আগে শুনেছি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে আজ রাজনীতি বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ৭ই জানুয়ারী নির্বাচনের নামে যে নাটক গণভবন থেকে চালানো হচ্ছে তা দূর্ভাগ্যজনক। কিছু দালাল ঠিক করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। ৭ তারিখের এই নির্বাচন আওয়ামীলীগের মরণযাত্রা হয়ে দাঁড়াবে।
এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ১৮ সালের ভোটকে আপনারা বলেন রাতের ভোট আসলে তা নয়। এটা আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দিনে দুপুরে ডাকাতি করে ফলাফল ঘোষণার নির্বাচন। ৭ জানুয়ারীর যে নির্বাচন তা একই প্রক্রিয়ায় ভোট ডাকাতির, হালুয়া রুটির ভাগাভাগির নির্বাচন। এই নির্বাচন যদি হয় তাহলে দেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে যা নিশ্চিত দুর্ভিক্ষের কবলে ফেলবে জনগণকে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ২০১৮ সালের যে নির্বাচন যেটা গোটা পৃথিবীতে স্বীকৃত যে ভোট সেটা রাতের ভোটই ছিলো, এটা প্রমাণ করতে কোন ডকুমেন্টস দরকার নাই।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, এই নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছে সবাই নৌকা চায়। তার মানে সবাই নিশ্চিত নৌকা মানেই নির্বাচিত। দেশে আজ দ্রব্যমুল্য নিয়ে হাহাকার চলছে, অথচ সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনের নামে তামাশা শুরু করেছে।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বাংলাদেশে রাতের ভোট আর জনগণ চায়না। রাজনীতিবিদদের আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশকি রাজনীতিবিদরা চালাবেন নাকি এই সিন্ডিকেট দ্বারাই দেশ চলবে।
সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ নির্বাচনী অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ১৯৯১, ৯৬, ২০০১ এর নির্বাচন ছিলো প্রশ্নের বাইরে, কারণ ভোটার উপস্থিতি, ভোট গ্রহণ পদ্ধতি, প্রার্থীদের প্রচার প্রক্রিয়া ছিলো স্বচ্ছ। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবই প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীজোট ভোট পায় ৮২.২৪ শতাংশ যা অবিশ্বাস্য অন্যদিকে ১৩৭টি আসনে ১১৭৯ টি আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট কোন ভোটই পায়নি। এটাই দেশজুড়ে হাজার হাজার ভোট কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার প্রমাণ। যা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা ও বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, এবি পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান, অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব আব্দুল বাসেত মারজান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেইন, সহকারী সদস্যসচিব এম আমজাদ খান, ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, শাহ আব্দুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন সহ এবি পার্টির কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply