জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: ডায়াবেটিস একটি অত্যন্ত জটিল রোগ। তবে এই রোগকে পাত্তা না দিলে আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে আরও অনেক রোগ। উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনি রোগের ঝুঁকিও বাড়তে থাকবে। চিকিৎসকের মতে, কায়িক পরিশ্রম কম করা, নিয়মহীন জীবনযাপনের কারণে নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলে অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, শরীরে উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়। রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো ডায়াবেটিস রোগের মূল কথা। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। টাইপ-২ রোগীর শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, একে ব্যবহার করতে পারে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় আগে থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ বা ইঞ্জেশন তো আছেই। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী একটি হাতিয়ার হতে পারে কাঁচা পেঁয়াজ ও এর রস। এছাড়া পেঁয়াজের রস খেলে করলে আপনার শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়, যা আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজের রস খেলে করলে আপনার চুল ও ত্বক দুটোই ভাল থাকে। এর সঙ্গে এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীরা যদি তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে পেঁয়াজের রস খেতে হবে। এর সাহায্যে টাইপ-১ এবং টাইপ-২ উভয় রোগীই নিজেদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
এর জন্য ২টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিন। এবার এটি একটি মিক্সার গ্রাইন্ডারে রাখুন এবং তারপরে ১ কাপ পানি, এক চিমটি কালো লবণ বা বিট লবণ এবং ১ চা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভাল করে মেশান।
এটি পান করলে শরীর প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। ডায়াবেটিস কমানোর সঙ্গে সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে এই পানীয়।
প্রতিদিন এমন অল্প পরিমাণ পেঁয়াজের রস খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাছাড়াও পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে। আর তা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
ভিটামিন এ, সি এবং কে রয়েছে কাঁচা পেঁয়াজে। রস করে খেলে আপনি এই সমস্ত ভিটামিনের উপকারীতা পাবেন। আর এই সব ভিটামিন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ আসলে কোনো সবজি নয়। এটি আসলে একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম এলিয়াম সেপা। এই বর্গের অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে রসুন, শ্যালট, লিক, চাইব এবং চীনা পেঁয়াজ। রসুনের মতোই এর গোত্র হচ্ছে লিলি।
পেঁয়াজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উৎপাদিত হয়। তবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় ভারত এবং চীনে। বাংলাদেশে যে সব এলাকায় শীত বেশি থাকে সেসব এলাকায় পেঁয়াজ বেশি জন্মায়। আকারে বড় না হলেও বাংলাদেশের পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি ঝাঁজালো বেশি হয়। কারণ এতে এলিসিনের মাত্রাটা বেশি থাকে। যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
একটি বড় মাপের পিঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। এ ছাড়া পিঁয়াজে ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে। এ ছাড়া শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর ২০ ভাগ মেটানো সম্ভব একটা পিঁয়াজ থেকেই। এছাড়া ডায়েটারি ফাইবার থাকে অনেক বেশি যা প্রায় ১২%। পেয়াজে মধ্যে কোন ফ্যাট নাই। এছাড়া পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি এবং আয়রন পাওয়া যায়। পেঁয়াজ ঔষধি গুণে ভরপুর, জেনে নিন যেভাবে পেঁয়াজ খেলে স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়-
ডায়াবেটিস থাকলে দীর্ঘদিন পরে তা চোখের উপর প্রভাব ফেলে। তাই চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পেঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পেঁয়াজে রয়েছে সেলেনিয়াম, যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন ই-এর ঘাটতি পূরণ করে।
পেঁয়াজের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যে কোনও ধরনের সংক্রমণের মোকাবিলা করে। পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-নাইন ও ভিটামিন সি। ফ্যাট, কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকায় প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় পেঁয়াজ থাকলে জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথার সমস্যাও কম হয়।
জৈব সালফার থাকে বলে পেঁয়াজের গন্ধ খানিকটা উগ্র ধরনের হয়। তবে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পেঁয়াজ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এর ফলে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও অনেকটা কমে যায়।
পেঁয়াজের মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন সিক্স, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ভীষণভাবে জরুরি। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে স্নায়ুর রোগের ঝুঁকিও কমে।
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক রয়েছে, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। তাই পেঁয়াজের রস খেলে আপনার স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
পেঁয়াজে এমন অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আপনার মেটাবলিজমের উন্নতিতে সাহায্য করে। আপনি যদি খালি পেটে পেঁয়াজের রস খান করেন তবে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর সঙ্গে এটি শরীরের ডিটক্সিফিকেশনেও সহায়ক, যার কারণে আপনার হজম প্রক্রিয়া ভাল থাকে।
চুলে পেঁয়াজের রস লাগালেই শুধু উপকার পাওয়া যায় না, পেঁয়াজের রস খেলেও চুল মজবুত হয়। পেঁয়াজের রস আপনার চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়, যা আপনার চুলকে মজবুত ও ঘন দেখায়।
আপনি যদি স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে চান তবে এর জন্য আপনি একটি পাত্রে পেঁয়াজের রস নিন। তারপর স্বাদ অনুযায়ী লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশিয়ে নিন। এই রস খেলে আপনার শরীর অভ্যন্তরীণভাবে পরিষ্কার হবে, যার ফলে আপনার ত্বক চকচকে দেখাতে শুরু করবে।
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর পেঁয়াজ হার্ট ভালো রাখতেও সক্ষম। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, সেখানে বলা হয়েছে, আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পেঁয়াজ খেলে ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ইউনিভার্সিটি অব গুয়েলফ এর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্তন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার এর কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম লাল পেঁয়াজ। লাল পেঁয়াজে উচ্চ পরিমাণে কুয়েরসেটিন এবং এন্থোসায়ানিন থাকার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। পেঁয়াজে উপস্থিত এই উপাদানগুলো ক্যানসার কোষগুলোর জন্য নিজে নিজে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথ খুলে দেয়- অনেকটা আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করার মত, মানবদেহকে ক্যানসারের জন্য অনুপযোগী করে তোলে আর এর ফলে ক্যান্সার কোষ বাড়তে পারে না
গবেষকরা জানাচ্ছেন, পেঁয়াজের রস টেস্টোস্টেরন হরমনের ক্ষরণ বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গমের ইচ্ছা বা স্ফুর্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। হরমোন বিশেষজ্ঞ এলিসা ভিটির মতে, ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পেঁয়াজের রস খেতে পারলে তা কামেচ্ছা বাড়িয়ে তোলে, সক্রিয় করে তোলে যৌনাঙ্গকে। কাঁচা নয়, পেঁয়াজ কুচি সামান্য মাখনে ভেজে মধু দিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে পারলে যৌন ক্ষমতা প্রায় তিন গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
Leave a Reply