জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি সরকার গঠন করে ওবায়দুল কাদেররা এখন ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- নির্বাচনের পর বিএনপি আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার যাতে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, সেজন্য তারা বিদেশি বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা কম্বোডিয়ার মতো নিষেধাজ্ঞা আশা করছে। আমি ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলতে চাই, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই বিদেশিদের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি সরকার গঠন করে আপনারা এখন ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন আপনারা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুঁজছেন। ৭ জানুয়ারিতে জনগণ আপনাদেরকে চূড়ান্তভাবে লালকার্ড দেখিয়েছে। সেই একদলীয় একতরফা ভুয়া নির্বাচনে ভোটাররা যায়নি। গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জালভোট ও অনিয়মের হাজারো চিত্র ভাইরাল হয়েছে। শিশুরাও দেদারসে সিল মেরেছে। আগে ভোট কেন্দ্রে গরু ছাগলসহ চতুস্পদ প্রাণীরা বিচরণ করলেও এবারের নির্বাচনে নতুন সংযোজন হয়েছে বানর। আওয়ামী লীগের পরাজিত দলীয় প্রার্থীরাও এই নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন বলে অভিহিত করেছে। এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আমাদের উন্নয়নে অংশীদারী দেশগুলোও তামাশার নির্বাচন বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। গুম, খুন, সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালিয়ে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ঢুকিয়ে একতরফা নির্বাচন আয়োজন করলেও জনগণ বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভুয়া ভোট বর্জন করেছে। নির্বাচনের পর কৃত্রিম আনন্দফুর্তিতে মেতে থাকার চেষ্টা করলেও আপনাদের মনে শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত ক্ষমতার ভয় তাড়া করছে আপনাদের।
কারণ সহিংসতা ও বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনের মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘রুশ—ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরাইলে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা—যার কারণে জিনিসের দাম আরও বেড়েছে। এর মধ্যে আমেরিকা হুতিদের আক্রমণ করলো, এ কারণে অর্থনীতিতে আরেকটা ধাক্কা আসবেই।’ আমি বলতে চাই ইউক্রেন যুদ্ধসহ কোনো কারণেই বিশ্বের অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। কারণ মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে কর্তৃত্তবাদী শাসন কায়েম করে উদ্ভট উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে মহাসমারোহে দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। এটি এখন সর্বজনস্বীকৃত। সরকারদলীয় লোকেরা সমস্ত ব্যাংক লুটে নিয়েছে। মন্ত্রী ও দলীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সকল পণ্যের মূল্য এখন আকাশচুম্বী। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আওয়ামী লীগের লোকজন পাচার করে যাচ্ছে। এক কেজি চালের দামে এক কেজি আলু কেনা যায় না। এই সবজির সিজনেও সকল সবজি একশো থেকে দু’শো টাকার নিচে নয়। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আকাশ স্পর্শ করছে। মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় সন্তান বিক্রি করে আহাজারি করছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা সুখস্বর্গের মধ্যে বাস করছে বলেই ক্ষুধার্ত জনগণের সাথে মশকরা করতে তাদের বাধে না। সরকারের মহাদুর্নীতি এবং অর্থ ও সম্পদ পাচারের কারণেই অর্থনীতিতে বারবার ধাক্কা আসছে।
রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি লোক দেখানো একদলীয় পাতানো ডামি নির্বাচন এবং চারদিনের মধ্যে বিশ্ব ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে কলঙ্কজনক সরকার গঠনের নজিরবিহীন ঘটনার পরও শেখ হাসিনার মধ্যে ন্যূনতম গ্লানি বা অপরাধবোধ নেই। ভোট ডাকাতি, দুর্নীতি, লুন্ঠন, অর্থ পাচার, হত্যা-গুম খুন, অপকর্মের মহাসাগরে ডুবে থাকলে মানুষ বোধহীন বিবেকহীন অমানুষ হয়ে পড়ে। এখন অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বসে দেশবাসীর সাথে সস্তা রসিকতা করছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন। ফুরফুরে মেজাজী ঢংয়ে পেয়ারা হিন্দুস্থানের হিন্দি গান শোনাচ্ছেন, রবিন্দ্র সংগীত শোনাচ্ছেন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রদর্শনের জন্য ডামীদের প্রতিযোগিতা আসর বসানোর স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ায় মতবিনিময় সভায় শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনে আমি বিস্মিত হতবাক হয়েছি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এখন তার অস্তিত্ব আধিপত্ববাদী শক্তির কাছে বিলীন করে দিয়েছেন। অন্য দেশের সরাসরি মদদে জনগণের ভোটাধিকার গলাটিপে হত্যা করে ইলেকশন ক্রাইম করেছে আওয়ামী লীগ। তারা এখন তাদের পক্ষে কোন দেশ নেই সেই হিসাব নিয়ে প্রহর পার করছে। গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বুঝে গেছেন গণতান্ত্রিক বিশ্ব এবং দেশের সমস্ত জনগণ তার বিপক্ষে। এখন তার নিরাপদ প্রস্থানের পথও অতি সংকুচিত হয়ে গেছে। সুতরাং এখন তার ভরসা একনায়কতান্ত্রিক কয়েকটি দেশ এবং আধিপত্যবাদী শক্তির নিকট নতজানু হয়ে থাকা। তবে এভাবে টিকে থাকতে পারবে না। জনগণের আন্দোলনে সরকারের পতন হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সত্যিকারের এবং গতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় হচ্ছে আমাদের চলমান আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply