জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারে আইন সংশোধনের জন্য কিছু দিনের মধ্যে কেবিনেটে যাবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেছেন, বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্ত রায় না হওয়া এবং দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে দোষী বলা যাবে না।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) রবিবার সকালে ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী একথা বলেন।
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভুঁঞা সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে আইনমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। অন্যদিকে দলটিকে ১০ বছর পর সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটা সাংঘর্ষিক কি না এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন।
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, জামায়াতকে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে বিচার করার জন্য আইন সংশোধন করার কথা, সেই প্রক্রিয়া চলমান। সংশোধনের জন্য যে আইন সেটি কেবিনেটে কিছু দিনের মধ্যে যাবে।’
‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই (সমাবেশের) অনুমতি দিয়ে থাকে। উনারা কী বিবেচনায় অনুমতি দিয়েছেন, আমার মনে হয়, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আপনারা যদি প্রশ্ন করেন, সেটা বেটার (ভালো) হবে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, এটা সাংঘর্ষিক। তার কারণ হচ্ছে, বিচার করার পরে যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি বলতে পারব না জামায়াত দোষী। বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং বিচারের প্রক্রিয়ায় আমি আজকেই বলব না যে কী হবে।’
‘অবশ্যই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার করেছি সেখানে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, জামায়তকে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে বিচার করার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। কিন্তু বিচার করার পরেই বলা যাবে তারা দোষী কি না। সেই জন্য আমি মনে করি না এটা সাংঘর্ষিক।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ট্রাইব্যুনালে বিচারে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ২০১৩ সালে আদালত রায় দেয়। এরপর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাদ:
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট ধারণ করা হয়েছিল কারণ, বিএনপির শাসনামলে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে যত উপনির্বাচন হয়েছে সবগুলোতে ভোট চুরি এবং মামলার সব ইতিহাস আপনারা জানেন। সেই কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি অনুচ্ছেদ সংবিধানে ঢোকানো হয়েছিল।’
‘হাইকোর্টে এটা চ্যালেঞ্জ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রায়ে বলে দেন, সংবিধানে ঢোকানো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুচ্ছেদ সংবিধানসম্মত নয়, সংবিধানবিরোধী। এটি যখন আপিল বিভাগের যায়, তখন একই রায় হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত বলা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাদ দেওয়া হয়।’
নির্বাচনকালীন ছোট সরকার হবে:
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন একটা নির্বাচনকালীন সরকার; আপনারা ২০১৪ সালেও দেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট রিশাফল করে যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে তিনি এ কথা বলেছেন, সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে সেসব রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে তিনি একটি ছোট সরকার করবেন।’
‘কারণ, নির্বাচনের যখন তফশিল ঘোষণা করে দেওয়া হয়, তখন নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যেসব সরকারি কাজ করতে হয় সেসব কাজ করেন আর সরকার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করে।’
খালেদা জিয়া সুস্থ হলে বাকি সাজা খাটতে হবে:
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনৈতিক সভা ও আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে উল্লেখ করেন।
আনিসুল হকে বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর তিনি যদি কোনো রাজনৈতিক সভায় যোগ দেন, তাহলে প্রমাণিত হবে, তিনি সুস্থ।’
‘স্বাভাবিকভাবে তিনি যদি সুস্থ হন, তাহলে তার দায়িত্ব হচ্ছে বাকি সাজা খাটা। যে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি বাতিল হলে সাজা কার্যকর হবে। তার সাজার মেয়াদ এখনো রয়ে গেছে।’
Leave a Reply