জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: জাতীয় সরকার গঠনে নয় দফা প্রস্তাব করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানস্থ ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই ৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সভায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব, চরমোনাই) বলেন, বিদ্যামান সংকট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর জাতীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনিভূত হচ্ছে। যা দেশের জনগণের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে এবং দেশে আরও একবার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ইসলামী আন্দোলনের নয় দফা প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন করে বলেন, এই রূপরেখা বিএনপি রূপরেখার সাথে অনেকাংশেই মিল আছে। তবে তিনি (পি.আর) পদ্ধতির সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেন। তিনি বরিশালে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফয়জুল করীমের উপর আওয়ামী বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসলামী আন্দোলন ইচ্ছা করলে পুরোদেশ অচল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সেটা তারা করেনি। এটা অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি ইসলামপন্থিদের অনৈক্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, জালিম সরকার হটানোর আন্দোলনে যাদের অবদান থাকবে, বিএনপি তাদের সাথে নিয়ে সরকার গঠন করবে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জে. অব. সৈয়দ ইবরাহীম বলেন, জাতীয় সরকারের সময়কাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আমরা চাই অন্তবর্তীকালীন সরকার। স্বাধীনতার পর যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব থাকবে এই সরকারে। পাশাপাশি জামায়াতের প্রতিনিধিও থাকতে হবে।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ৭০ এর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ৬৯ এ গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য ছিল। ৯১ এর নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাচনের জন্য ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আগামীর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ২০২৩ এ আরেকটি গণঅভ্যুত্থান। যে অভ্যুত্থানের মূল দাবি হবে আমরা আমাদের অধিকার চাই।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আরো বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি করেছেন তিনি। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেজাউল করীম বলেন, স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীন এর আমীর মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, বাংলাদেশ কল্যান পার্টি চেয়ারম্যান
মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, জাপার একাংশের নেতা গোলাম মসীহ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, সাবেক ভিসি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ। তবে জিএম কাদেরপন্থি জাতীয় পার্টির কেউ মতবিনিময় সভায় অংশ নেননি।
এছাড়াও ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম,
বাংলাদেশ মসজিদ মিশন ও সেন্ট্রাল মসজিদ মিশন সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, খন্দকার গোলাম মাওলা বক্তব্য রাখেন।
Leave a Reply