জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: বরিশাল সিটিতে বিজয়ী হয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। দলীয় কোন্দল, বলতে গেলে ঘরোয়া বিবাদের মধ্যে তার এই জয় তাৎপর্যপূর্ণ।
এই নির্বাচনের মনোনয়ন পাওয়া থেকে প্রচার-প্রচারণার শেষদিন পর্যন্ত খোকন সেরনিয়াবাত পাশে পাননি আগের দফায় নির্বাচিত মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে। এমনকি বরিশালে ভোট দিতেও আসেননি খায়েরের বড়ভাই হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে সাদিক।
এই সিটি নির্বাচনে বিএনপি না গেলেও খোকন সেরনিয়াবাতকে লড়তে হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমের হাতপাখার সঙ্গে। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে নৌকার খায়ের পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৭৫২ এবং হাত পাখার ফয়জুল করিম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। সে হিসেবে নৌকার প্রার্থী ৫৩ হাজার ৪০৭ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
গত ৩ এপ্রিল বরিশাল সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ১৫ এপ্রিল মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান খায়ের আবদুল্লাহ। মূলত নৌকা প্রতিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবার পর আলোচনায় আসেন তিনি। রাজনীতিতে অপরিচিত আবুল খায়ের সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে চমক দেখালেন।
জানা গেছে, সাবেক কৃষি মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। রাজনীতিতে তিনি অপরিচিত মুখ। পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন খুলনায়। বছরখানেক আগে বিকল্প রাজনীতি সৃষ্টি করতে বরিশাল আগমন তার। বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কাছ থেকে বঞ্চনার শিকার হয়ে বরিশালের রাজনীতিতে পদার্পণ করেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে দলীয় নমিনেশন পান। মূলত ভাতিজার সাথে দ্বন্দ্ব থেকেই বরিশালের রাজনীতিতে প্রবেশ খোকন আবদুল্লাহর।
আরও পড়ুন>দলীয় কোন্দল, ঘরোয়া বিবাদ উড়িয়ে বরিশালের মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘বিদেশগামী পণ্যবাহী জাহাজের ব্যবসা করি ১৯৮০-৮১ সাল থেকে। হালাল রুজি উপার্জন করছি। জাতির পিতার ভাগিনা পরিচয়ে কোথাও কোনো ক্ষমতা দেখিয়েছি বা প্রভাব খাটিয়েছি, কেউ বলতে পারবে না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এখন মানুষের সেবা করে কাটাতে চাই।’
কে এই খোকন আবদুল্লাহ: আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন আবদুল্লাহ বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। সাবেক কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র আবুল খায়ের আবদুল্লাহও ৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালো রাতে নির্মমতার শিকার হয়েছেন। হাত ও পায়ে প্রায় ছয়টি গুলি লাগে তার; এখনও শরীরে সেই গুলির স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মৃত্যর পর বড় ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশালে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। নানা চড়াই উতরাইয়ের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সংসদের চিফ হুইপ হন। এরপর ২য় দফায় আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে সরকার গঠন করলে হাসনাত আবদুল্লাহ এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরিবারের নিকটাত্মীয় হলেও আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত অনেকটা নিরবে নিভৃতে থেকেছেন। টানা এত বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে (খোকন) চিনতেন না। মাস দুয়েক আগে নগরের কালুশাহ সড়ক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন খোকন সেরনিয়াবাত।
রাজনীতিতে যে কারণে: আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের রাজনীতির প্রতি কোনো ঝোঁক ছিল না। ভাই হাসানাত আবদুল্লাহ এবং ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহর কিছু কর্মকাণ্ডে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়েই বরিশালে রাজনীতি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে কালিবাড়ি রোডস্থ নিজের পৈত্রিক বাড়ি সেরনিয়াবাত ভবনে ভাতিজা সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কারণে থাকতে না পারা তাকে মারাত্মক কষ্ট দেয়। নিজের বাড়ি থাকা স্বত্ত্বেও ভাড়া বাসায় থাকার এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানা পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু এ বিষয়ে নিজের ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও হিরনপন্থী কিছু নেতা কর্মীরা খোকন আবদুল্লাহকে বরিশালের রাজনীতিতে পদার্পনে উত্সাহিত করেন। মূলত ভাতিজার সাথে দ্বন্দ্ব থেকেই বরিশালের রাজনীতিতে প্রবেশ খোকন আবদুল্লাহর।
Leave a Reply