জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মন্ত্রীদের ‘অপপ্রচার’ ফের তাকে কারাগারে নেওয়ার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ। আজকে না বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। আপনারা জানেন একবার তাকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। তিনি খুব জটিল কিছু রোগে ভোগছেন। তার মধ্যে আছে লিভার সংক্রান্ত জটিলতা। এছাড়া হৃদরোগ ও ডায়বেটিক জটিলতাও আছে।
এর পরও যদি তারা এই সমস্ত কথা-বার্তা বলেন, অপপ্রচার করেন, এর মানে হচ্ছে; তারা আবারও গভীর চক্রান্ত করছেন। যে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কি না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বার বার করে বলেছি যে; তার চিকিৎসা পাওয়া একটা মৌলিক অধিকার। এজন্য ডাক্তারা বলেছেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। বাংলাদেশে তার সেই উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার সে বিষয়ে কোনও কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু এই ধরণের (অপপ্রচার) কথা বার্তা বলে অমানবিক আচরণ করছেন তারা আমাদের দেশনেত্রীর সঙ্গে এবং জনগনের সঙ্গে একটা তামাশা করছেন। ৭৭ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগে ভোগছেন।
অত্যবশ্যকীয় পরিসেবা বিলের সমালোচনা:
অত্যবশ্যকীয় পরিসেবা বিল জনগনের স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটি নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীকবীদের স্বার্থ বিরোধী, একতরফা, ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। এই আইনটি প্রণয়নে কোনও পর্যায়ই অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি।
বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত বিলটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুন্ন করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থী। বিএনপি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়, অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যেকোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠা, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীন শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু শ্রমজীবী নয়, পেশাজীবীরা প্রস্তাবিত আইনটির প্রতিবাদ করছে। আমাদের ডাক্তার ও নার্সরাও প্রতিবাদ জানিয়েছে, তারা এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা বলেছে এটা বাতিল না করা হয় তারাও আন্দোলনে নামবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে যেমন একটা ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে তেমনি এই প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে আরেকটা বৃহত্তর পরিসরে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হবে। ধর্মঘট করার অধিকারটা খুব বেসিক ট্রেড ইউনিয়ন রাইট। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিশন অব হিউম্যান রাইটসে বলা হয়েছে যে, ট্রেড ইউনিয়ন রাইট ইজ এ হিউম্যান রাইট।
নজরুল বলেন, সাংবাদিকরাও শ্রমিক। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে অনেক প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ছিলেন। এর মধ্যে আমার একজন ওস্তাদও আছে প্রয়াত সিরাজুল হোসেন খান, প্রয়াত নির্মল সেন। যারা জাতীয় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনাদের সাংবাদিকদের যে ট্রেড ইউনিয়ন আছে সেটা রেজিস্টার্ড। আপনাদের ওপর নানা চাপ আছে। হয়ত পারছেন না কিছু করতে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নে আপনারাও অংশীদার।
যে আইন যেটা করা হচ্ছে, এই আইনে সাংবাদিকরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এই কারণে যে, আইনে বলা হয়েছে যে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেনো এই আইনের বিধানবলী প্রাধান্য পাইবে। অর্থাৎ প্রচলিত অন্য কোনো আইনে প্রটেকশন পেয়েও থাকেন এই আইন হয়ে যাওয়ার পরে আর সেটা থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহুমদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply