জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: রাজধানীতে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। এতে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও জড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরদের নামও উঠে এসেছে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপকে পেছনে থেকে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে।
গত দুই দিনে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৭৫ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তেজগাঁও, গুলশান, উত্তরা ও মতিঝিল এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
ডিবি বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে বর্তমানে ধনীর সন্তানরাও জড়িয়ে যাচ্ছে। তারা মারামারিসহ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন জানান, মঙ্গলবার ও বুধবার মিলিয়ে ৭৫ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং একটি ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাই, ইভটিজিং, হুমকি দেওয়া, স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের ভয় দেখানো ও বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এই কাজগুলো তারা দলবদ্ধ হয়ে করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা নামে প্রভাব বিস্তার করে আসছে তারা।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ইয়ংস্টার, বিগবস, ডিস্কো বয়েজ, বন্ধু মহল, শীল বিষু গ্যাং, পারভেজ গ্রুপ, রুস্তম গ্রুপ, ইয়ংস্টার গ্রুপ, নাইনএমএম গ্রুপ, নাইন স্টার গ্রুপ। রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে উজ্জল গ্রুপের সদস্যদের আটক করা হয় বলে জানান ডিবিপ্রধান।
কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোর অপরাধের চিত্র তুলে ধরে হারুন অর রশীদ বলেন, তারা মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছে। কতিপয় বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এমনকি চুরি-ছিনতাই করত তারা। এ সব কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গত দুই বছরে ৩৪ জন কিশোর নিহত হয়েছে।
ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা এক সময়ে মনে করতাম ভাসমান ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চ মধ্যবিত্ত, ধনীর ঘরের আলালের দুলালরাও কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের পোশাক, চুলের কাটিং চলাফেরা সবই ভীতিকর। এসব ধনীর সন্তানরা প্রথমে মাদক সেবন, পরবর্তীতে মাদক বিক্রিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তারা এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক বড় ভাই আবার কখনো কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে থেকে তারা হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের ছত্রছায়ার অভিযোগ রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দুই দিন ৭৫ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সবাই কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত থাকার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।
কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এখন সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এ কিশোররা স্কুলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদক সেবনের মতো উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছে। আমরা গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছি। তবে আমি মনে করি অভিভাবকদের উচিত তার সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে তার খোঁজ রাখা উচিত। পাশাপাশি মা-বাবার উচিত সন্তানদের সময় দেওয়া। আসলে গ্রেপ্তার করে কিশোর গ্যাং দমন করা যাবে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয় দেওয়া বড় ভাইদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। এই সব নাম তদন্ত করে আমরা দেখব কারা কারা কিশোর গ্যাং সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। তবে আমি মনে করি এসব কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপরাধ করার তথ্য তো কাউন্সিলররা জানেন।
হারুন বলেন, মাহফিল ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের নামে এক হচ্ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য। নানা গ্রুপের সদস্যরা কিন্তু বড় বা রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করে। মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে। কিশোর গ্যাংয়ের এমন দৌরাত্ম্যের কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পরিবারের সদস্যদের কিশোর গ্যাং দমনে এগিয়ে আসতে হবে। তবে কিশোর গ্যাং বিরোধী ধারাবাহিক অভিযান চলবে। এই বিষয়ে কেউ সুপারিশ নিয়ে এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply