অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জনমত জরিপগুলোতে এতদিন ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে এগিয়ে ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস। কিন্তু এবার চমকে দিয়ে কমলাকে টপকে যাওয়ার পথে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের জরিপ বলে দিয়েছে, দেশব্যাপী ৪৭ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ সমর্থন। অথচ এর আগে গত আগস্টে আরেকটি জরিপ করেছিল সংবাদমাধ্যমটি। সে সময় ট্রাম্পের চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন কমলা। এদিকে গত ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনে নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যয় হওয়া সমপরিমাণের (হাফ বিলিয়ন ডলার) অর্থের বিনিময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের ভোটের ব্যবধানও সমান সমান অর্থাৎ ৪৮% করে হয়েছে। এ যেন এক অদ্ভুত ব্যালটযুদ্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। বিগত দিনের কর্মকান্ড নিয়ে বোধ-বিবেচনা ক্রমান্বয়ে অপসারিত হচ্ছে মার্কিন ভোটারদের ব্যালটযুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণে। আর এমনি পরিস্থিতি দৃশ্যমান হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজের সর্বশেষ জরিপে। দোদুল্যমান সাত স্টেটসহ সারা আমেরিকার তালিকাভুক্ত ভোটারের মধ্যে পরিচালিত সর্বশেষ এই জরিপে ৪৮%-৪৮% অবস্থান দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরের ২০ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী চালানো হয় এ জরিপ। এর আগের জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ১৯ থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল/ফ্যাবরিজিয়ো লি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস পরিচালিত জরিপে কমলা-৪৬% এবং ট্রাম্প-৪৯%, অক্টোবরের ১৬ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত বার্তা সংস্থা রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত জরিপে কমলা ৪৮% এবং ট্রাম্প ৪৫%, অক্টোবরের ১৭ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত মনমাউথ ইউনিভার্সিটি পরিচালিত জরিপে কমলা ৪৭% এবং ট্রাম্প ৪৪%, অক্টোবরের ১৪ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ইউএসএ টুডে/সাফোক ইউনিভার্সিটির জরিপে কমলা ৫০% এবং ট্রাম্প ৪৯%, অক্টোবরের ১২ থেকে ১৭ তারিখের মধ্যে অ্যাটলাস ইন্টেল পরিচালিত জরিপে কমলার প্রতি ৪৮% এবং ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন উঠে এসেছে ৫১% আমেরিকানের। সবকটি জরিপ ফলাফল পর্যালোচনায় ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না। উল্লেখ্য, ২৫ অক্টোবর ভোরে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৩ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৪২০ জন আমেরিকান আগাম ভোটে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাট-৩৯% এবং রিপাবলিকান ভোটার ১৮% অর্থাৎ আগাম ভোটে (সশরীরে কেন্দ্রে গিয়ে অথবা ডাকযোগে পাঠিয়ে) অংশগ্রহণের মাত্রা রিপাবলিকানদের মধ্যে কিছুটা বেড়েছে। আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান নীতিনির্ধারকরা আগাম ভোটকে জালিয়াতির অন্যতম অবলম্বন হিসেবে অভিযোগ করেছিলেন। এদিকে জনমত জরিপে দুই প্রার্থীর মধ্যকার ব্যবধান ক্রমান্বয়ে কমে আসায় ডেমোক্র্যাটরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন দোদুল্যমান স্টেট তথা বিজয় নির্ধারণী সাত স্টেটে কমলার ভোটব্যাংক সুসংহত করতে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা, সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি এবং মিশেলও নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন। গুরুতর অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করতে একসময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল কমলাকে কেন হিমশিম খেতে হচ্ছে? কেন ট্রাম্পকে ভোটারদের কাছে নিন্দিত-ঘৃণিত হিসেবে চিহ্নিত করতে ডেমোক্র্যাটরা ব্যর্থ হচ্ছে-তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। সবকিছু মিলিয়ে অনুমিত হচ্ছে যে, ৫ নভেম্বরের ভোট গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট তা কোনো জরিপেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই টিভি, প্রিন্ট মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাত্রাও উভয় পার্টি বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত কত অর্থ ব্যয় করেছেন প্রার্থীরা তার বিবরণী সাবমিট করা হয়েছে ফেডারেল ইলেকশন কমিশনে। সেখানে দেখা যায়- কমলা এবং ট্রাম্পের মোট ব্যয় হয়েছে হাফ বিলিয়ন ডলার। গত ৮টি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনাকালে দেখা গেছে, সাতটিতেই ডেমোক্র্যাটরা জাতীয়ভিত্তিক পপুলার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে একটিতে বিজয়ী হন রিপাবলিকান প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে। আসন্ন নির্বাচনেও তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
Leave a Reply