অনলাইন ডেস্ক : সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা আজ ঢাকায় মিছিল করেছেন।
তারা বলছেন, এমন গণহত্যা মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে গণহত্যা, নিপীড়ন, ছাত্রনেতাদের অপহরণ সভ্য রাষ্ট্রের পরিচয় দেয় না। সরকার অনুশোচনা না করে উল্টো ছাত্রদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. তাসমেরি এসএ ইসলাম, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, কবি আবদুল হাই সিকদার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, আইনবিদ ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান, প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ, প্রফেসর ড. আবদুল করিম, সাংবাদিক এম এ আজিজ, শহিদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, আলোকচিত্রী একেএম মহসিন, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. গোলাম হাফিজ কেনেডি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইথুন বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মিছিল শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রফেসর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভিন্নমত ও দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার। আজ সরকার এই অধিকার কেড়ে নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে গণদুশমনে পরিণত হয়েছে। যাদের হাতে নাগরিক নিরাপদ নয়, তাদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে গণহত্যা, নিপীড়ন, ছাত্রনেতাদের অপহরণ সভ্য রাষ্ট্রের পরিচয় দেয় না।
প্রবীণ এ শিক্ষাবিদ যৌক্তিক দাবিতে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ বলপ্রয়োগের কারণে এমন রক্তক্ষয়ী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘সংবিধান দেশের জনগণকে ভিন্নমত প্রকাশ, সভা, সমাবেশ, প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকার দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি চালানোর কোনো অধিকার সরকারের নেই। নির্বিচারে মানুষ হত্যার পর তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখি না। উল্টো ছাত্রদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এমন গণহত্যা মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, জীবনের চেয়ে সম্পদের মূল্য বেশি নয়। গণমাধ্যমে এমন বহু শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা উঠে আসছে, যারা আন্দোলনে ছিলেন না। সরকারি বাহিনীর ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ ছোড়া গুলিতে হত্যার পাশাপাশি নিজের বাড়িতে, ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা এমনকি ঘরের ভেতরে থাকা মানুষও গুলিতে নিহত হয়েছে। এসব হত্যার বিচার করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে এমন তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বন্ধ করতে হবে। সরকার বন্ধ করবে না, কারণ এসব তো তারাই করছে। তাই তাদের এসব বন্ধ করানোর জন্য জনগণকে নেমে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতার অভিযোগে যেভাবে ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তার চলছে এবং রিমান্ডের যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা বেআইনি।
ছাত্র বিক্ষোভ দমন করতে নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার উৎসব চলছে উল্লেখ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বুদ্ধিজীবী বলেন, রাত হলেই ব্লক রেইড দিয়ে ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এখন রাতের ঢাকা জনগণের জন্য এক বিভীষিকাময়। এভাবে সরকার দেশটাকে মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য করে তুলেছে।
Leave a Reply