অনলাইন ডেস্ক : কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকালে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন এবং বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের সংবর্ধনা ও মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিল। কোটা বাতিল করার পর কোটাহীনভাবে সরকারি চাকরিতে এবং অন্যান্য চাকরিতে অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে কোটা পুনর্বহাল করার। সেটি আবার সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েই কোটা বাতিল করেছিল। সুতরাং সমাধানটা আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে। আদালতের বাইরে গিয়ে আদালতকে উপেক্ষা করে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এটি বুঝেও যারা জনগণের ভোগান্তি বাড়াচ্ছেন, সরকার জনগণের যাতে ভোগান্তি না হয় সেটার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।
মন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আশা করবো সর্বোচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করবে। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু বিষয়টি নিয়ে রায় দিয়েছে সেহেতু চূড়ান্ত রায় সেখান থেকেই আসতে হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, যখন ছাত্রদল কোটা আন্দোলনকারীদের সমর্থন দেয়, যখন রিজভী সাহেব, গয়েশ্বর বাবু, মঈন খান যখন এটার পক্ষে সোচ্চার হন, তখন বুঝতে হবে ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। বুঝতে হবে এটার ভেতরে রাজনীতি ঢুকে গেছে। সুতরাং আমি ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধ জানাবো রাজনৈতিক অপশক্তির ফাঁদে যেন না পড়ে। সরকার তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে জনগণের ভোগান্তি বাড়ালে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আশা করবো তারা ক্লাসে ফিরে যাবে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করবে।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি দল হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে দেশে যাতে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। জীবনযাপনে যাতে কেউ ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে। সেদিকে নজর রাখার দায়িত্ব সরকারি দলের নেতাকর্মীদেরও আছে। সুতরাং আপনারাও এ ব্যাপারে নজর রাখবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজনৈতিক বিরোধী শক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এখন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। নিজেদের যখন আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই। তখন তারা পরজীবী হয়ে গেছে। আজকে তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার। প্রথম ষড়যন্ত্র ছিল নির্বাচনকে ভন্ডুল করার। নির্বাচন বানচাল করার। সেই ষড়যন্ত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশে গত ৩-৪ বছরে ভোট হয়েছে। সেখানেও অনেক দেশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। আর বাংলাদেশে নির্বাচন ভন্ডুল করার জন্য জনগণের উপর হামলা করা হয়েছে। পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, এমনকি নির্বাচন বর্জন করার ডাক দিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সুতরাং নির্বাচন অত্যন্ত অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
নির্বাচনের পর ষড়যন্ত্র ছিল। তারা চাতক পাখির মতো তাকিয়েছিল এই সরকারকে বিশ্ব সম্প্রদায় কীভাবে নেয়। ৮১টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করে গেছেন। আমরা ভারতে গিয়েছিলাম। এরপর ভারত থেকে চীনে গিয়েছি এবং আমি চীন থেকে সরাসরি আবার ভারত গিয়েছি। এটি আমাদের পররাষ্ট্র নীতির সৌন্দর্য। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। কারো সাথে বিরোধিতা নয়।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) এসএম কামাল হোসেন, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, বগুড়া-৬ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নান, বগুড়া-৭ আসনের এমপি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, বগুড়া-৩ আসনের এমপি খাঁন মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধনসহ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply