জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: যানজটের নগরী ঢাকাকে গতিশীল করতে চালু হওয়া মেট্রোরেলের (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি) এক বছর পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর)। যানজট ও বিশৃঙ্খল গণপরিবহনের এই শহরে দ্রুত ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এই এক বছরে অনেকটাই নগরবাসীর কাছে আস্থার বাহনে পরিণত হয়েছে মেট্রোরেল।
২০২২ সালের এই দিনে উত্তরা উত্তর স্টেশনে যাত্রী উঠানামা কার্যক্রম শুরু করা মেট্রোরেল বর্তমানে ১৪ টি স্টেশনে থামছে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ও ১৪তম স্টেশন হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজয় সরণি চালু হয়।
তবে সবগুলো স্টেশনে না থামার কারণে এখনো মেট্রোরেলে যাতায়াতের স্বপ্ন পূরণ হয়নি অনেকের, সেইসঙ্গে মেট্রোরেল চলাচলের সময়সীমা নিয়েও অনেকের মধ্যে আছে প্রশ্ন। এর বাইরে সম্প্রতি বিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধের মধ্যে ট্রেনে নাশকতার কয়েকটি ঘটনার পর মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত যাত্রীরা। এমতাবস্থায় গত সপ্তাহে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে জোর দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ. মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, মেট্রোরেলের স্টেশনে ঢোকার প্রবেশপথগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে পর্যবেক্ষণ, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি, স্টেশনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার পর খোলা জায়গায় (কনকর্স হল) আর্চওয়ে, ট্রেনে ওঠার আগে লাগেজ স্ক্যানার ও বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু শনাক্তে যন্ত্র রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদারের ঘোষণার এক সপ্তাহ পর মেট্রোরেলের নিরাপত্তা দেখতে সরেজমিনে আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো ঢিলেঢালা নিরাপত্তাতেই এই স্টেশনের যাবতীয় কাযক্রম চলছে। এছাড়া নিরাপত্তা বাড়াতে আর্চওয়ে বসানোর কথা থাকলেও সেটা এখনো বসানো হয়নি। তবে এখানে দায়িত্বরত এমআরটি পুলিশের শরীরে ক্যামেরা, ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, ব্যাটন আর ওয়াকিটকি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে আগারগাঁও স্টেশনের প্রবেশের দুটি মুখে একটিতে একজন আনসার সদস্য থাকলেও অন্য মুখে নিরাপত্তাকর্মীর কাউকে চোখে পড়েনি, নিরাপত্তা কর্মীর অনুপস্থিতিতে একাধিক ব্যক্তিকে সিগারেট টানতে টানতে মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক অটোমেটিক সিড়িতে চড়তে দেখা যায়। অটোমেটিক সিড়ি পার হয়ে দ্বিতীয় তলায় টিকিট সংগ্রহের স্থানে প্রবেশমুখে এমআরটি পুলিশের দুইজন সদস্য নিয়োজিত থাকলেও সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নির্দিষ্ট স্থান ছেড়ে অপর পাশে গিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায়। পরে সাংবাদিক পরিচয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা নির্দিষ্ট স্থানে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
তবে সেখানে, দুই ঘন্টার মতো অবস্থান করলেও কাউকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। সন্দেহজনক ব্যক্তিকে তল্লাশীর ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তাদের একজন উত্তর দেন, ‘মেট্রোরেলে সাধারণত শিক্ষিত এবং উচ্চশ্রেণির মানুষ যাতায়াত করে এজন্য তাদের তল্লাশি করা যায় না।’
এদিন একাধিক এমআরটি পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, নিরাপত্তা আগের মতোই রয়েছে, এছাড়া উপর থেকে তাদের কোনো নির্দেশনাও আসেনি।
নাম না প্রকাশে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এমআরটি পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিরাপত্তা বাড়াতে আমাদের এমআরটি পুলিশ সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন।’ তিনি জানান, এই স্টেশনে তিন শিফটে ভাগ হয়ে নিরাপত্তা দেন ১১ জন এমআরটি পুলিশ।
এছাড়া নিরাপত্তার প্রশ্নে এই স্টেশনের একাধিক আনসার কর্মকর্তাও জানান, নিরাপত্তা আগেও যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে, কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এদিন হাসান সায়েদ নামের এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মেট্রোরেলের মতো এত বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্টে নিরাপত্তার ঘাড়তি দুঃখজনক৷ মেট্রোরেলের কোনো স্টেশনে স্ক্যানার নেই, প্রতিদিন এতে যে পরিমাণ মানুষ যাতায়াত করে মান্যুয়ালি চেক করা পসিবল না। মেট্রোরেলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে দু’একজনের জীবন যাবে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত।’
আগারগাঁও স্টেশন থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনগামী এক নারী বলেন, ‘ভাড়া একটু বেশি হলেও যানজটে বসে থাকার চেয়ে মেট্রোরেল চলাচলই ভালো। বর্তমান গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেট্রোরেল নিরাপত্তা আরেকটু জোরদার করলে ভালো হবে।’
এছাড়া বেশকিছু যাত্রী অভিযোগ তুলেছেন মেট্রোরেলের ওয়াশ রুম এবং নামাজের জায়গা নিয়ে। শুধুমাত্র মেট্রোরেলে ওঠার আগ মূহুর্তে পুরুষ ও মহিলাদের ভিন্ন দুটি ওয়াশ রুম রয়েছে মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে। কিন্তু মেট্রোরেলের টিকিট কিনতে দীর্ঘ লাইন এবং টিকিট কাটার পরও দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করা লাগে যাত্রীদের। তাছাড়া টিকিট না কিনে যে ফ্লোর থেকে ট্রেন ছাড়ে সেখানে যাওয়ার কোনো সুযোগও নেই, যার কারণে ওয়াশ রুম ব্যবহারে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের। এছাড়া নামাজের স্থান চারপাশে আটকানো না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। নামাজ পড়ার জন্য ভালো পরিবেশ করে দিতে কর্তপক্ষকে আহ্বান জানান যাত্রীরা।
এমআরটি পুলিশের এসপি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ নাশকতা করে বেরিয়ে যাবে এমন এখানে হবে না-এটা নিশ্চিত করতে পারি।’ তার ভাষ্য, নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতা ঠেকাতে ও মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় জরুরি হয়ে পড়েছে যাত্রীদের মালামালের ওপর নজরদারি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অটোমেটেড লাগেজ স্ক্যানার, আর্চওেয়ে গেটের জন্য আবেদন করেছি। এগুলো থাকলে যাত্রীদের সুবিধা হবে এভং আমরা দেখতে পারবো তারও কাছে কিছু আছে কিনা।’
Leave a Reply