জেএন ২৪ নিউজ ডেস্ক: অবিলম্বে এই মুহূর্তে দেশের সীমান্তজুড়ে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের সীমান্ত নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় দেশের নাগরিকদের জান-সম্পদ। গণতন্ত্র হত্যাকারী, ভোট ডাকাত, ক্ষমতালোভী দুর্নীতিবাজ লুটেরা আর টাকা পাচারকারী মাফিয়া চক্রের কাছে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব যখন সংকটে তখন স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি চুপ করে বসে থাকতে পারে না। সুতরাং শুধুমাত্র আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বিজিবির ওপর নির্ভরশীল না থেকে অবিলম্বে এই মুহূর্তে দেশের সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন এখন সময়ের দাবি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশ আজ এক গভীর সংকটে নিপতিত। দেশ যেন আজ উন্মুক্ত কারাগার। বিপন্নতার মুখে দেশের স্বাধীনতা। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা দূরে থাক বর্তমানে দেশের সার্বভৌমত্বই হুমকির সম্মুখীন। স্বাধীনতা বিপন্ন প্রায়। একজন মাত্র ব্যক্তির অবৈধ ক্ষমতার লিপ্সা মেটাতে বছরের পর বছর ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করে রাখা হয়েছে। বিরোধী দল এবং মতের মানুষকে ফাঁসাতে নানা রকমের তথাকথিত গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হামলা করছে তাদের সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা তার গোয়েন্দারা কোনো খোঁজখবর রাখেন না।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষনেতা বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যাতে রাজধানীতে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষ সদস্যকে রাজধানীতে তৎপর অথচ সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত। অরক্ষিত সীমান্ত স্থাপনা, থানা, পুলিশ, ব্যাংক, বীমা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ডামি সরকারের তাঁবেদারি পররাষ্ট্র নীতির কারণে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধ করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেন দেশের সীমান্ত এত অরক্ষিত, অবহেলিত এ ব্যাপারে ডামি সরকার জনগণকে কিছুই জানতে দিচ্ছে না।
রিজভী বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ গভীর উৎকন্ঠা ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, বাংলাদেশে বর্তমানে মিয়ানমারের ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস। ২০১৭ সাল থেকে আজ এতো বছরেও শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজন মানুষকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেখা যায় প্রায়শই মিয়ানমারের শত শত জান্তা সেনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। আবার কয়েকদিন পরই দেখা যায়, বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে যথারীতি মিয়ানমার ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। ৫-৬ বছরেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধিকেও ফেরত পাঠানো যাচ্ছেনা। অথচ শত শত জান্তা সেনা বাংলাদেশে ঢোকার পর পুনরায় তাদেরকে মিয়ানমার পাঠানোর ক্ষেত্রে ডামি সরকার কি পলিসি গ্রহণ করছে সে সম্পর্কেও জনগণ অন্ধকারে। দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণ জানতে চায়, তবে কি বাংলাদেশ যুদ্ধ করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ?
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তই অরক্ষিত নয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও চলছে রক্তের হোলিখেলা। বেড়েই চলছে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের লাশের সারি। অথচ নির্বিকার শেখ হাসিনার তাঁবেদার সরকার। কথায় কথায় বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে গুলি করে হত্যা করছে। গত তিন মাসে সীমান্তে কমপক্ষে ১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালেও নওগাঁ এবং লালমনিরহাট সীমান্তে লিটন এবং আলামিন নামে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ক্ষমতাসীন অপশক্তি ২৬ মার্চ সারাদিন স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুখে খৈ ফোটালেও সীমান্তে লিটন এবং আলামিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা একটিবারের জন্যও মুখে উচ্চারণ করেনি।
রিজভী বলেন, জনমনে প্রশ্ন, যদি স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও লিটন-আলামিনদেরকে সীমান্তে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয়, তাহলে আমরা কিসের স্বাধীনতার কথা বলছি ? কার স্বাধীনতার কথা বলছি? কিসের উন্নয়নের কথা বলছি ? কার উন্নয়নের কথা কথা বলছি ?। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সঙ্গে মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান, চীন এবং নেপালেরও সীমান্ত রয়েছে। অথচ বিএসএফ অন্য আর কোন একটি দেশের সীমান্তেও যখন তখন এভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করার সাহস করেনা। অবৈধ ক্ষমতালিপসু শেখ হাসিনার তাবেদার সরকারের কারণে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানির লাশের মতোই যেন ঝুলছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্ব। দেশের ৯৫ ভাগ ভোটার ৭ জানুয়ারির ডামি ভোট বর্জন করেছে। এরপর যাদের করুণা কিংবা অনুকম্পায় শেখ হাসিনা বিনা ভোটে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সমর্থ হয়েছে, সেই প্রভুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস এই ডামি সরকারের নেই। এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘ডামি সরকার যখন দেশের সীমান্ত রক্ষায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এমন এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে বান্দরবানে শুরু হয়েছে ব্যাংক লুট, পুলিশের অস্ত্র লুট, অপহরণ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা। ডামি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যে বলা হয়েছে, কথিত কুকি—চিন নামে সশস্ত্র গোষ্ঠী ব্যাংক লুট, অস্ত্র লুট, পুলিশ ক্যাম্প—থানায় হামলা—অপহরণ এবং অস্ত্র ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। গত ৪ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরো একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। তার বক্তব্যটি একাধারে বেশ কৌতূহলোদ্দীপক এবং উদ্বেগজনকও বটে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কুকি—চিনের আস্তানা আমাদের র্যাব ও আর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। তারা আমাদের সীমানা পার হয়ে ভিন্ন কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেভাবেই তারা অবস্থান করছিল। এখন তারা কোত্থেকে আসছে, কীভাবে আসছে; মাঝে মাঝে তাদের প্রতিনিধি এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। তারা বলছিল, তারা শান্তি চায়। অনেক কিছুই বলছিল’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী, কুকি—চিন সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও তাদের সম্পর্কে তেমন খোঁজ খবর রাখেনি কিংবা রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কোনো এক অজ্ঞাত—অজানা কারণে কুকি—চিনকে তোয়াজ করা হয়েছে। কেন কুকি—চিনকে এতো তোয়াজ করা হয়েছে, এর পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য।
রিজভী বলেন, দেশবাসী জানে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী পাহাড়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বেড়ে উঠলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কুকি—চিনের পরিবর্তে পাহাড়ে তথাকথিত জঙ্গি ধরার নাটক করেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, এই কুকি—চিনকে ব্যবহার করে নিজেদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে অবৈধ ক্ষমতালিপ্সু শেখ হাসিনার সরকার বর্তমানে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। কুকি—চিন গত দু’তিন দিন যেভাবে বান্দরবানে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে তাতে স্পষ্টই প্রমাণিত, এই সশস্ত্র গোষ্ঠী সম্পর্কে দেশের গোয়েন্দারা ছিল বেখবর কিংবা তাদেরকে বেখবর করে রাখা হয়েছে। বান্দরবানের কুকি—চিনের চলমান ভয়াবহ হামলা শেখ হাসিনার বিনাভোটের সরকারের তাঁবেদারী পররাষ্ট্রনীতির কুফল ছাড়া আর কিছুই নয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশপ্রেমিক জনগণ মনে করে, শেখ হাসিনার তাবেদার সরকারের কারণেই কুকি—চীন বর্তমানে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের ভয়াবহ ঘটনাকে কোনো বিচ্ছিন্ন কিংবা একটি সাধারণ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। সুতরাং, কুকি—চিনের তৎপরতা বন্ধ করতে হলে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অন্যথায় ব্যাংক লুট এবং দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার ঘটনার প্রকৃত রহস্য কখনোই জানা সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ডা. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply