দেশের প্রচলিত আইনে জুয়া খেলা অবৈধ। এছাড়া অনলাইন বেটিং বা জুয়া প্রতিরোধে নানারকম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এসব নিয়মবিধি উপেক্ষা করে সক্রিয়ভাবে নিজের স্যোশাল মিডিয়ায় অনলাইন জুয়ার প্রচারে নেমেছেন উপস্থাপিকা, নৃত্যশিল্পী এবং ব্র্যান্ড প্রমোটার বারিশ হক।
মূলত ফেসবুককেন্দ্রীক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচারকাজ করে থাকেন বারিশ হক। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ১২ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। সেই পেজ থেকে বিগত কয়েক মাস ধরেই ‘সিটিবিডি২০’ নামে একটি জুয়ার সাইটের প্রচারণা করেন বারিশ।
বারিশের ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখা যায়, দেশের শীর্ষ তারকাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখান থেকে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ছাড়েন তিনি। ইডিটিংয়ের মাধ্যমে সেসব ভিডিওর মাঝে জুড়ে দেন বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন। সেগুলোতে ঘরে বসে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা আয়ের প্রলোভনসহ বেটিং সাইটে যুক্ত হওয়ার কৌশল ও বেটিং করার পদ্ধতি শেখান তিনি। আর ভিডিওর কমেন্টে দিয়ে দেন সাইটের লিংক।
জেএন ২৪ নিউজ জানতে পেরেছে, এজেন্টের মাধ্যমে এসব ভিডিওর প্রচারণা করেন বারিশ। প্রতি ভিডিওতে তিনি লক্ষাধিক টাকা নিয়ে থাকেন।
গত ১৫ আগস্ট রাতে বারিশের পেজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই জুয়ার সাইটটির প্রমোশন করছেন বারিশ। ভিডিওতে দুই দফা সেই সাইটের ছবি তুলে ধরা হয়। প্রথমবার ভিডিওর ৪০তম সেকেন্ডে এবং পরবর্তী সময়ে ১ মিনিট ৪০তম সেকেন্ডে সাইটটির প্রমোশন করেন তিনি। ছবি প্রকাশের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওই সাইট দ্রুত ডাউনলোডের আহ্বান জানান বারিশ। ভিডিওটি প্রায় ১০ লাখ বার দেখেছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।
ভিডিওতে প্রথম দফায় বারিশ বলেন, তোমরা যারা ঘরে বসে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করতে চাও, তারা সিটিবিডি২০ ডট কমে যোগাযোগ করতে পার। কীভাবে টাকা দেবে বা উত্তোলন করবে, সেগুলোর বিস্তারিত এ ভিডিওর কমেন্ট বক্সে দেওয়া থাকবে। একই ভিডিওতে দ্বিতীয়বার বলেন, যারা এখনও অ্যাপসটি ডাউনলোড করোনি, তারা দ্রুত ডাউনলোড করো। কারণ, অনেকেই এখান থেকে মাসে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। আর ডিপোজিট মানি (জমা দেওয়া অর্থ) অনেক সময় ফিরে পাওয়া যায় না, কারণ গেমে হেরে যায় অনেকে। এটা পুরোপুরি ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে।
একই সাইটের প্রমোশন করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১টায় ফের ভিডিও প্রকাশ করেন বারিশ। এ ভিডিওটিও দেখা হয় সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। ভিডিওর ৪৯তম সেকেন্ডে সাইটটির প্রমোশন শুরু করেন। ৫৬তম সেকেন্ডের সময় বলেন, অনেকেই বলো যে, টাকা ডিপোজিট (জমা) করে পাচ্ছ না। আসলে যারা ডিপোজিট করে রিটার্ন (উত্তোলন) পায় না, তারা আসলে উইন (জয়) করতে পারও না। উইন করতে পারে—এমন অনেক রিয়েল কাস্টমার (আসল গ্রাহক) আছে। তোমরা সেই প্রুফগুলো (প্রমাণ) কমেন্ট বক্সে পেয়ে যাবে। এ ভিডিওর কমেন্ট বক্সে একটা লিঙ্ক দেওয়া আছে, যেখানে তোমরা ডিটেইলস (বিস্তারিত) পাবে। কীভাবে টাকা ডিপোজিট করা যাবে, কারা কারা টাকা পেয়েছে, কারা কারা পায়নি; সবকিছু এখানে জানতে পারবে।
সরকার ও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত এসব সাইটের প্রচার প্রসঙ্গে জানতে বারিশের সঙ্গে যোগোযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, অনলাইনে এসব জুয়ার সাইট মূলত ফাঁদ। এগুলোর সঙ্গে কেউ যুক্ত হলে লাভ করা তো দূরের কথা, বরং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেকে এসবের মাধ্যমে দেশের টাকা পাচার করছে বিদেশে। এ ধরনের অ্যাপস বা সাইট ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে সবাইকে আহ্বান জানান এই বিশেষজ্ঞ। তিনি এসব প্রচারণা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অবৈধ, আমরা জুয়া এলাও করি না। আমাদের নজরে এলে আমরা এসবের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। আমরা সবসময় জুয়ার প্রচারণা না চালাতে সবাইকে বলে থাকি।’
এছাড়া কোনো পেজে এসব পাওয়া গেলে পেজগুলো বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা আছে বলেও জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
Leave a Reply